Header Ads

Header ADS

> "তৃপ্ত ছায়া" < -

> "তৃপ্ত ছায়া" <
-
----- "পর্ব উনষাট"
-
অবশেষে বিয়ের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হল!
সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে গেস্টরা যার যার মত বিদায় নিয়ে চলে গেলন।
আকাশ বন্ধুবান্ধব সবাইকে বিদায় দিয়ে বাসায় ফিরে পরিবারের সদস্যদের সাথে খানিক আলাপচারীতা শেষে রুমের দিকে গেল,
তার নতুন বউ মাথায় ইয়াবড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে এমন দৃশ্য কল্পনা করতে করতে বাসর ঘরে ঢুকতে যাবে কিন্তু এমন সময় সে আবিষ্কার করলো দরোজাটা ভেতর থেকে বন্ধ! সে ভাবলো নতুন বউকে কেউ কোন টিপস শিখিয়ে দিচ্ছেন ভাবি টাইপ কেউ হবেন হয়তো।
আকাশ বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করে দুরজায় টুকা দিলো! সাথে সাথে ভেতর থেকে কেউ তীক্ষ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
- কে?
কথাটা শুনে আকাশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো, কারণ নিজের ঘরে প্রবেশ করার সময় পরিচয় দেয়ার অভিজ্ঞতা তো এই প্রথম। তবুও সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
- জ্বী আমি।
- জ্বী আমি কে, নাম নেই?
এবার তার মেজাজটা গেল গরম হয়ে।কি আজিব, আজ মেঘলা কেমন যেন অচেনা হয়ে গেল হঠাৎ, ব্যাপার কিছুই বুঝলনা।
- না নাম নেই। দরজা খোলার প্রয়োজনও নেই। গুড বাই।
জোরে জোরে কথাগুলো বলে আকাশ সেখান থেকে চলে আসবে টিক এমন। সময় দেখে ওর আব্বু বুলবুল আহাম্মেদ সাহেব অদূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছেন। উনাকে দেখে সে তখন খুব অপমানিত বোধ করলো, তাই উনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল!
- হুহ" বিয়ে না করলেই নয় যেন! প্রথমদিনই এই অবস্থা।
পিতাজি তার কথা না শুনার ভান করে চলে গেলেন। বলার অপেক্ষা রাখেনা প্রয়োজনীয় বিনোদন তিনি পেয়ে গেছেন।
- এই যে এসো।
নারীকণ্ঠ শুনে আকাশ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে তার নতুন বউ মেঘলা দরজা খোলে তাকে ডাকছে। উনারপপ মাথাটাই শুধু দেখা যাচ্ছে।
- আসতে পারবোনা, আমি ছাদে যাচ্ছি।
- ঠিক আছে আমিও আসছি, আমি শাড়িটা চ্যাঞ্জ করে আসছি, একটু অপেক্ষা করো।
কি বলে এই মেয়ে! সেও ছাদে যাবে মানে! ইজ্জত তো ফালুদা হয়ে যাবে এই ভেবে আকাশ তড়িঘড়ি করে গিয়ে রুমে ঢুকলো!
আকাশকে রুমে ঢুকতে দেখে মেঘলা বলে উঠলো,
- তুমি আসলে কেন? আজিব তো!বললাম না আমি কাপড় চ্যাঞ্জ করব?
আকাশ হা করে মেঘলার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকলো, যেন মেঘলাকে সে জীবনেও দেখেনি এই প্রথম দেখলো, তার মনে হচ্ছে আজ যেন সাক্ষাৎ পরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে, সত্যি আজ মেঘলাকে অপুর্ব সুন্দর লাগছে, তাই সে মনে মনে বলল, বাহ" আমার বউটা তো বেশ সুন্দর।
- কি হলো' এভাবে আহাম্মকের মত তাকিয়ে আছ কেন, বাইরে যাও বলছি।
প্রায় তাকে ঠেলে ঘর থেকে বের করে দেয়া হল। পৃথিবীর কোথাও বাসর ঘরে এমন ভাবে নতুন বউয়ের কর্মকাণ্ড। ঘটেছে বলে মনে হয়না আকাশের, কিন্তু কি আর করা একমাত্র কলিজার টুকরা বউ বলে কথা। তাই চুপচাপ এমন অমানবিক নির্যাতন সয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো।
মিনিট কয়েক পর মেঘলা দরজা খোলে বের হলো, শাড়ি আর ভারী গহনাগাঁটি খোলে এসেছে। একটা জামদানি থ্রীপিছ গায়ে তার। পিংক কালারের খুব সম্ভবত। মেঘলাকে কিন্তু এই ড্রেসে বেশ ভালোই লাগছে।
যাইহোক" মেঘলা বের হয়েই বলল,
- আমি শাড়ী টারি একদম পড়তে পারিনা। প্লীজ কখনো অনুরোধ করনা।
- আমি পড়িয়ে দিলে?
- চলবে।
আকাশ আর কিছু বলল না, কারণ শাড়ীতে মেঘলাকে ভালো লাগে টিক কিন্তু আকাশ সেটা ইজ্জৎ মনে করেনা।
তারপর ওরা একে অপরের হাত ধরে ছাদে যাচ্ছে, যেতে যেতে মেঘলা বলল,
- শুনো' ছাদে যাবার আগে কিছু খাবার নিয়ে এসো, খুব ক্ষিধে পেয়েছে। ছাদে বসে খাওয়া যাবে।
আকাশদের ছাদের দক্ষিন পাশে একটা ছাউনির মত ঘর আছে। চারপাশে দেয়াল নেই কিন্তু উপরে ছাদ আছে। তার নীচে চারটি চেয়ার আর একটি টেবিল। আকাশের বাবা বুলবুল আহমেদ প্রায়ই এখানে বসে চা খান, মাঝে মাঝে ওর আম্মুকে নিয়েও গল্প করেন।
আজ আকাশ তার নতুন বউকে নিয়ে সেখানেই বসল। আজ মেঘলার জীবনে নতুন পৃথিবীর নতুন যাত্রা, অথচ বাসায় আসার পর থেকে এখনো পর্যন্ত মেঘলার সাথে আকাশের তেমন কোন স্বাভাবিক আলাপ হয়নি। তাই সামনা সামনি চেয়ারে বসল তারা, আজ কেন জানি আকাশ ইচ্ছে করেই ছাদের লাইট জ্বালাইনি। কিন্তু আজ আকাশে চাঁদ আছে যদিও মেঘের সাথে যুদ্ধ করতে করতে বেচারা হয়রান। মাঝেমধ্যে মেঘেদের দল যেন চাঁদের সাথে ফাজলামো করছে।
জ্যোৎস্নার নির্মল আলোতে পুরো জগৎ যেন সাঁতার কাটছে। চাঁদের এই রুপোলী-স্নিগ্ধ আলোতে রাতের পৃথিবী অন্য সাঁজ ধারণ করে। রাতের এই রুপ আকাশকে সম্মোহিতের মত টানে।
প্রায় প্রত্যেক জ্যোৎস্নার রাতেই এদিকটাতে হাঁটতে আসে সে।
যাইহোক" দুজনই চুপচাপ বসে আছে, কারো কোন সাড়াশব্দ নেই, আকাশ অপলক ভাবে থাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে, ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলো এসে পরছে মেঘলার মুখে। আদৌ আলো আদৌ ছায়ায় মেঘলাকে বেশ দারুণ লাগছে। কিছুক্ষণ নিরবতার পর হঠাৎ আকাশ মেঘলাকে চেতানোর জন্য বলল,
- প্রিয়ন্তি বড্ড কঠিন নাম, আমি বরং তোমাকে প্রিয়া বা অন্তি বলে ডাকি।
- এই খবরদার" আমার নাম নিয়ে কোন ঢং করবানা' বলে দিলাম। আমার নাম প্রিয়ন্তি চৌধুরী মেঘলা, এই নামেই ডাকবে। না পোষালে রাস্তা মাপ।
- রাস্তা মাপ মানে? আমি কি ঠিকাদার নাকি!
- নাহ' তুমি টেইলার।
- মানে!
- মানে' টেইলারদের স্বভাব শুধু কাটাকাটি, তুমিও আমার নাম নিয়ে কাটাকাটি করতে চাও।
- ওকে আর করবনা বেবি, সরি।
- মনে থাকে যেন। (কিঞ্চিত কৃত্রিম অভিমানী গলায়)
এবার আকাশ জিজ্ঞেস করল,
- মনি' কেমন আছ?
- মন্দ আছি।
- মন্দ থাকার কারণ?
- বিএফ কে বিয়ে না করে অপরিচিত কাউকে বিয়ে করলে মন্দই থাকে মানুষ।
মেঘলার উত্তর শুনে ধড়াস করে উঠলো আকাশের বুকের ভেতর। মেয়েটা কি সিরিয়াস কথা বলছে, তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করল, কিন্তু বুঝার উপায় নেই তবে সে ধরে নিল সত্যি বলছে। কিন্তু মেঘলার সাথে এত বছরের রিলেশনে তো কখনো দেখেনি ওর আরেকটা বিএফ আছে। আকাশের মনটা কেমন যেন মুচড় দিয়ে উঠলো, তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
- বি এফ এর কথা মনে পড়ছে নাকি খুব?
কথাটা আকাশ এমন ভাবে জিজ্ঞেস করল যে, মেঘলা যদি হ্যা বলে তবে তাকে বিএফ এর কাছে দিয়ে আসবে।
- হে খুব মনে পড়ছে, দাও ফোনটা একটু কথা বলি।
মেঘলার হ্যা সুচক উত্তর শুনে আকাশ রোবটের মত মোবাইল এগিয়ে দিলো,
- নাও কথা বল।
মেঘলা রাগে গিজগিজ করতে করতে মোবাইলটা হাতে নিয়ে আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর নাম্বার টিপতে লাগলো। আকাশ ভাবছে তার কি এখানে থাকা উচিৎ? মুহূর্তেই সে উঠে দাঁড়াল,
- কই যাও তুমি? (কথাটা একটু ধমকের সুরেই যেন বলল মেঘলা)
- এইতো আছি এখানেই, তুমি কথা বল।
- তোমার কোথাও যেতে হবেনা, বসো চুপ করে। আমার বিএফ এর সাথে তোমার পরিচয়টা থাকলে ভালো হবে।
আকাশ আবার বসে পড়ল, মেঘলা কানে মোবাইল ঠেকিয়ে আকাশের দিকে তীক্ষ চোখে তাকিয়ে আছে, আবছা আলোতে চোখ দুটো জ্বলছে মনে হল।
- ভাবী' তোমরা এ কার সাথে বিয়ে দিয়েছ আমার। আকাশ তার মোবাইল দিয়ে আমার পূরাতন প্রেমিকের সাথে কথা বলতে বলছে। শুধু তাই না, আমাকে একা কথা বলার সুযোগ দিয়ে সে চলেও যেতে চাচ্ছে।
ঘটনার আকষ্মিকতায় আকাশ একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেল, মেঘলা তাহলে তার ভাবীকে ফোন দিয়েছে। তার মানে বিএফ টিএফ কিছুনা। তার সাথে মজা করেছে। কিন্তু আকাশ তো ফেল গেল, কথা গুলো ভাবতে থাকলেও তবে সে অনেকটা স্বস্থি পেল। যদিও আকাশ মেঘলার বিএফ এর সাথে পরিচিত হতে মানসিক ভাবে প্রস্থুত ছিল, ভাবীর সাথে কয়েক মিনিট চললো মেঘলার কান্নাকাটি। এই কয়েক মিনিটে কমপক্ষে চারবার আকাশকে বোকা সম্বোধন করেছে ওর ভাবীর কাছে।
অবশেষে বাতচিত শেষ হল। কিন্তু বিপদ তখনো কাটেনি। মেঘলা ফোন কেটে আকাশকে বলল,
- আমি বাসায় ফিরে যাব ভাবীর কাছে। আমি তোমার মত বোকা মানুষের সংসার করবনা।
- আমি বোকামীটা কি করলাম! তুমি কথা বলতে চাইলে আমি ফোন দিলাম।
- চুপ" একটা কথাও না। তোমাকে আমি চিবিয়ে খেয়ে ফেলব।
একথা বলেই আকাশের দিকে কটমট করে তাকিয়ে টেবিল থেকে একটা আপেল তুলে কামড় বসালো।
তখন আকাশ জিজ্ঞেস করল,
- ভাবীর কাছে যাবে?
- অবশ্যই যাব।
- তাহলে চল। পরে আবার ড্রাইভার ঘুমিয়ে পড়বে। তোমার ভাবীকে বলছো আমরা যাচ্ছি?
- তুমি কোথায় যাবে! ড্রাইভারকে নিয়ে আমিই যাব।
মেঘলার উত্তর শুনে আকাশ একদম দমে গেল, সত্যি সত্যি যদি এই মেয়ে চলে যায় এখন, তবে মানসম্মান আর কিছুই থাকবেনা।
- তুমি কি সিরিয়াসলি বলছ মনি?
মেঘলার জবাব শুনার আগেই দেখে ছাদে আকাশের আব্বু ও আম্মুর আগমন। কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচল সে, কিন্তু সে বাবাকে দেখে লজ্জায় কাঁচুমাচু হয়ে গেল, সে ঠিক এখনো বুঝে উঠতে পারেনি যে- উনারা তারা আছে একথা জেনে এসেছেন নাকি এমনিতে এসেছেন।
আকাশ উঠে দাঁড়ালো, সেই সাথে মেঘলাও, নাহ' মেয়েটা বেশ আদব কায়দা জানে দেখা যায়। উনারা আসা মাত্রই পা ছোঁয়ে সালাম করলো, তবে এই মেয়েকে আর বিশ্বাস নেই। কখন কি বলে।
- এতরাতে কে কোথায় যাচ্ছ তোমরা?
আকাশের বাবা প্রশ্নটা কাকে করলেন বুঝা গেলনা। আকাশ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল, মেঘলাও তাই।
তখন আকাশের আব্বু আম্মু চেয়ার দুটি টেনে বসলেন।
- বৌমা দাঁড়ালে কেন, বসো মা।
বাহ' আম্মু যেন বউমা কে নিয়ে পারলে কোলে বসান। অথচ আকাশের দিকে কেউ তাকাচ্ছেওনা। মেঘলাও কি সুন্দর বসে পরলো।
- ওয়েটারের মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন তুই? মনে হচ্ছে আমরা অর্ডার করব আর তুই খাবার নিয়ে আসবি। বস।
উক্তিটি কার তা আর বলে দেয়া লাগবেনা। হে তা আকাশের পিতাজির উক্তি। আকাশ আর কি করবে, সেও বসে পড়লো। কোন কিছুর উপর নির্ঘাত একটা লেকচার চলবে বুঝতে পেরেছে সে।
- তা বললেনা যে কোথায় যেতে চাচ্ছিলে তোমরা??
পিতাজির প্রশ্নের জবাবে আকাশ ঠাস করে বলে উঠলো,
- নীচে আব্বু।
কিন্তু কে জানত ভরা মজলিসে আকাশের নতুন বউ তার ইজ্জতের ফালুদা করবে। মুহূর্তের মেঘলা বলে উঠলো,
- উনি মিথ্যা বলছে আব্বু, আমি বাসায় চলে যাব বলেছি।
- বাসায় চলে যাবে! কেন মা?
আকাশের আম্মু যারপর নাই অবাক হয়েছেন। আর আব্বু জিজ্ঞেস করলেন,
- এই অকম্মাটা কিছু বলেছে বউমা?
আকাশের আব্বুর প্রশ্ন শুনে মেঘলা ফিক করে হেসে দিল। তখন আকাশ লজ্জায় মাথা তুলতে পারছিল না।
- আপনার ছেলে আস্ত একটা বোকা আব্বুনী...!
মেঘলার কথা শেষ হবার আগেই আকাশ ঝট করে উঠে দাঁড়াল, তা দেখে ওর আব্বু বলল,
- কিরে তুই রোবটের মত লাফ দিলি কেন? বস বলছি।
আকাশ আবার বসে পড়লো। তবে তার প্রায় কান্না আসছে। তাই সে মনে মনে বলল সোনাবউ তোমারে একবার ভাগে পাইয়া লই, দেখাবো মজা। তারপর আকাশ মাথা নিচু করে আছে, আর মেঘলা হেসেই যাচ্ছে। সে আব্বু আম্মু দুজনেরই সাপোর্ট পাচ্ছে। হঠাৎ আব্বু বললেন,
- তোমাদের দুজনকে একটা মজার কথা বলি আজ বউমা।
- জ্বী আব্বু বলেন।
- আজ আমার আর নাজমার ৩১ তম বিবাহ বার্ষিকী। কোনদিক দিয়ে যে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল টেরই পেলামনা।
- এই তুমি চুপ করতো।
কারণ ওর আম্মু লজ্জা পাচ্ছিলেন খুব। তাই উনাকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছেন, কিন্তু আকাশের দস্যি বউয়ের কারণে তার আব্বু আম্মুর মানা সত্যেও বলা শুরু করলেন। এদিকে উনার কথা শুনে মেঘলা মুহুর্তেই বলে উঠলো,
- হ্যাপি রিটারনস অফ দ্যা ডে আব্বুনী এন্ড আম্মুনী,
তারপর আকাশকে বলল,
- এই তুমি শুভেচ্ছা জানাবেনা বাবা মাকে?
আকাশ যেন এতক্ষন এখানে ছিলইনা। মেঘলার কথায় তাড়াহুড়ো করে বলল,
- হ্যাপি এনিভারসারি আব্বু-আম্মু।
আজকের এই মুহূর্ত গুলো আকাশের কাছে সবকিছু সপ্নের মত লাগছিলো। বিশেষ করে আব্বুকে এত কাছ থেকে আর কখনো দেখা হয়নি তার। সারাজীবন উনার সাথে একটা বিশাল গ্যাপ ছিল। মেঘলা আবার তাড়া দিল আব্বুকে সেদিনের ঘটনা মানে তাদের বিয়ের গল্প বলার জন্য। আব্বুকেও যেন আজ গল্প বলার নেশায় পেয়েছে। উনি আবার বলতে লাগলেন।
- সেদিন এরকম মাঝ রাতে ঠিক তোমাদের মত আমরা ছাদে চলে এসেছিলাম চুপি চুপি। তোমার শাশুড়ি মায়ের যদিও প্রথমে আপত্তি ছিল।
কথা গুলো শুনে ওর আম্মু লজ্জায় যেন শূণ্যে ভেসে যাবেন।
- এই তুমি থামবে এবার?
এমন সময় মেঘলার মাথায় কি ভূত চাপল কে জানে। হঠাত উনাদের বলল,
- আপনারা গল্প করেন, আমরা একটু পর আসছি।
এই বলে আকাশকে প্রায় টেনে হিচড়ে নীচে নিয়ে এলো। আকাশ মেঘলার কর্মকান্ডে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
- কি ব্যাপার এভাবে নীচে নিয়ে আসলে কেন মনি?
- তুমি আসলেই বোকা। আম্মু আব্বুকে একটু পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করার সুযোগ দিলাম। আর কিছু কাজও আছে।
- কি কাজ?
- উনাদের বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করব।
- কিন্তু কিভাবে, দোকান পাঠ কিছুইত এত রাতে খোলা পাবেনা মনি।
- তা ঠিক" তবে উপায় হয়ে যাবে। তুমি কয়েকটা মোমবাতি যোগাড় কর আর কিছু কেক পাওয়া যাবে বাসার ফ্রীজে?
- হে মনি, থাকতে পারে!
মেঘলার বুদ্ধিমত্তা দেখে আকাশ বেশ অবাক হয়ে তড়িঘড়ি করে কয়েকটা মোমবাতি খুব সহজেই যোগাড় করল, তারপর ফ্রিজে উকি দিয়ে কয়েক পিছ সাদা কেক পাওয়া গেল।
- আরেকটা জিনিস বাকি। আল্লাহ" যেন পাওয়া যায়।
- আর কি?
- সস।
সসও পাওয়া গেল ফ্রিজে। আকাশ মেঘলার কর্মকাণ্ড দেখে সত্যি অবাক হল, সব কিছু রেড়ি করার পর মেঘলা একটা ট্রেতে সাদা কেকের পিছগুলা রেখে চারদিকে মোমবাতি বসালো। আর সস দিয়ে কেকের উপর লিখলো- "আব্বা আম্মার ৩১তম বিবাহবার্ষিকী "।
রান্নাঘর থেকে সে নিজেই চাকু নিয়ে এসে আকাশকে বলল,
- চলো এবার ছাদে।
আকাশ ট্রে টা হাতে নিয়ে বিমোহিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার খুব ইচ্ছে করছে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরতে, কিন্তু তা না করে বলল,
- তুমি না ভাবীর কাছে যাবে? তাহলে এতসব কেন?
আকাশের কথা শুনে মেঘলা গালফুলিয়ে বলল,
- তুমি কি চাও আমি চলে যায়?
- তুমিই তো বললে, তাহলে মিথ্যে মায়ায় জড়িয়ে কি লাভ?
- বাসায় কি লবন মরিচ আছে?
- কেন? তা কি দিয়ে কি করবে মনি?
- ভাবছিলাম তোমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবো,
কথাটা শুনে আকাশের হাসির বদলে কান্না চলে এলো, চোখটা ঝাপসা হয়ে গেল। তবুও ওর সামনে কাঁদতে চাইল না। তাই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল।
- চল মনি, আব্বু-আম্মু অপেক্ষা করছেন।
তারপর ওরা স্বাভাবিক হয়ে ছাদে ফিরে গেলো, তখন রাত দুইটা বাজে। এই মুহূর্তে বাসার ছাদটা যেন একটা ছোট স্বর্গপুরীতে পরিণত হয়েছে। যাকে এতক্ষণ অচেনা বলে মনে হয়েছিল সে এখন সেই আগের মেঘলায় ফিরে এলো। আজ আকাশের নিজেকে পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে এই দৃশ্যের একজন হতে পেরে। শতাব্দীর পর শতাব্দী গেলেও এমন দৃশ্যের অবতারণা হয় বলে মনে হয়না।
অল্পক্ষনের মধ্যে আব্বু-আম্মু মোমবাতি নিভিয়ে কেক কাটলেন। আকাশের কলিজার টুকরা বউ মেঘলা আকাশকে নিয়ে ডুয়েল স্বরে বললো "হ্যাপি এনিভারসারি ডিয়ার আব্বু-আম্মু"।
কেক কাটার পর হটাৎ আকাশের বাবা বুলবুল আহাম্মেদ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে উনার হাত দুটো বাড়িয়ে দিলেন, তখন আকাশ ও মেঘলা আব্বু-আম্মুর বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে গেলো, কতক্ষণ যে ওরা এভাবে ছিল কারো খেয়াল ছিলনা। অনেক্ষন পর নিজেদের ছাড়িয়ে নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে প্রত্যকেই একে অপরের অলক্ষ্যে চোখের জল মুছায় ব্যস্ত। কারণ বুঝ হবার পর এই প্রথম আব্বুকে আকাশ জড়িয়ে ধরলো, নিজের অলক্ষ্যেই চোখের জলে ওর আব্বুর কাধ ভিজিয়ে দিলো।
তারপর আকাশের আব্বু-আম্মু একে অপরকে কেক খাওয়ালেন, সাথে আকাশ ও মেঘলাকেও দিলেন। প্রকৃতি হল নীরব দর্শক এই অসাধারণ বিয়েতে বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠানটির।
আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আকাশের বাবা মেঘলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- বউমা তুমি আমার পুত্রবধূ নয়, তুমি আমার মেয়ে, আর আমার বিশ্বাস তুমি আমার কলিজার টুকরা ছেলেটাকে সারাজীবন আগলে রাখবে। তৃপ্ত ছায়া হয়ে পাশে থেকো মা।
তারপর আকাশকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- বাবা আকাশ" তোর উপর আমি সারাজীবন অভিচার করেছি, স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত করেছি, আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্যই করেছিলাম বাবা, নাহয় আজ তুই জীবন কি বুঝতে পারতিনা, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতিনা, আজ আমি সত্যিই গর্বিত যে তোর মত একটা গর্বিত সন্তান আমারও আছে! পারলে ক্ষমা করে দিস বাবা, আর বউমাকে সাধ্যমত ভালো রাখার চেষ্টা করিস, আমরা এখন শান্তিতে মরতে পারবো, কখনো আফসোস থাকবেনা বাবা!!
তারপর আকাশ ও মেঘলা দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
- বল" আজকের দিনটাতে তোরা আমার কাছে কি চাস? যা চাইবি তা পাবি। বল তোরা বাবার কাছ থেকে কি পেলে খুশি?
তখন ওরা হাসি মুখে বাবা মায়ের শিয়রে বসে কোলে মাথা রেখে হাত দুটো দিয়ে পা জড়িয়ে বলল,
- আমরা সারাজীবন এভাবে আব্বু আম্মুর স্নেহের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই।
ওদের কথা শুনে আকাশের আব্বু-আম্মু দুজনই কেঁদে ফেললেন, তারপর সন্তানদের মাথায় আলতো পরশে হাত বুলিয়ে দুজনই দুহাত উপরে তোলে রবের কাছে প্রার্থনা করলো,
- হে আমাদের রব' হে আল্লাহ, তুমি আমাদের এই সন্তানদ্বীগকে সারাজীবন ভালো রেখো। এভাবে হাসিখুশি আনন্দের সাথে রেখো। ওদের কাছে আজকে আমরা যা পেয়েছি তাতে আমাদের অন্তরাত্মা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। হে দয়াময়, আজকের এই ক্ষনে তোমার কাছে একটাই চাওয়া, তুমি তাদের এই আজকের পথ চলাটা যেন পথের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত টিকিয়ে রেখো।( আমিন)
মোনাজাত শেষে আকাশকে বললেন,
- তোরা বস বাবা, এবার আমরা আসি!
- জ্বী না আব্বু, বরং আপনারাই বসুন, আমরা আসছি।
এই বলে আকাশ মেঘলাকে নিয়ে নিচে রুমে ফিরে গেলো।
-
-------চলবে-------
-
মিস প্রিয়া চৌধুরী।

No comments

জনপ্রিয় পোষ্ট

  জন্ম নিবন্ধন করবেন ভাবছেন, আর ভাবনা নয় সপ্ন এখন সত্যি সব এখন হাতের মুঠোয়, [ http://bdris.gov.bd/br/application ]( http://bdris.gov.bd/br...

Powered by Blogger.