Header Ads

Header ADS

>" তৃপ্ত ছায়া "<,

>" তৃপ্ত ছায়া "<,
-
------ " পর্ব চুয়ান্ন",
-
শীতের রাত, ঘড়ির কাটাই দশটা বাজলেই যেন চারপাশ নিরব হয়ে যায়, সচরাচর এই সময়ে প্রতিটি মানুষের ঘুমটা একটু বেশিই হয়। আকাশও তার ব্যতিক্রম নই, কিন্তু ইদানীং আকাশের ব্যস্ততা একটু বেশি বেড়ে যাওয়াতে টিকমত ঘুমানোর সময় হয়না, তাই আজকের দিনটা সম্ভবত তার জন্য বরাদ্দ, সেজন্য আজ সে অফিস ছুটি শেষে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে, রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে মেঘলাকে ফোন দিয়ে ভাল মন্দ খবরাখবর নিয়ে ফোন রেখে দিয়ে শুয়ে পড়ল। অনেকদিন পর আজকে একটা শান্তিতে ঘুম দিল আকাশ।
...
- তুমি হঠাৎ আসো অনলাইনে, আবার হঠাৎ চলে যাও। বলে যাও না কেন?(মেঘলা)
- আমি কি হজ্জ্ব করতে যায় নাকি? এতে বারবার বলার কি আছে?(আকাশ)
- উফ! অসহ্য!
- কি অসহ্য?
- তোমার মাথা!
- অ'
- আবার অ? বলছি না 'ওহ' বলবা?
- অ! সরি! ও।
- তুমি সেদিন বাসার মধ্যে আমার বান্ধবী রাইসাকে কি বলছো?
- বলছি আমার বড্ড খিদে পাইছে কিছু খাওয়ান। আর খাওয়া শেষে বললাম ১০০০ টাকার নোট। খুচরা নাই, বিল দিয়ে দেন।
- উফ! এটা না। ও নাকি ছাদের উপর ভাবিরা সবাই বসাতে চেয়ার খালি না পেয়ে রেলিংয়ের পাশে থাকা চেয়ারটাতে বসেছিল আর তুমি সামনের চেয়ারে?
- হ্যাঁ। তারপর রাইসা বলল ভাইয়া আসেন অদলবদল করি। খুব গরম লাগছে সারাদিন রোধের মধ্যে থাকা চেয়ারটাই।
- আর তুমি কি করলা?
- আমি আমার সামনের টেবিলে রাখা পানির বোতলটা এগিয়ে দিলাম যাতে চেয়ারের ওপর সিটে ঢেলে দিয়ে তারপর বসে।
- ওই ফাজিল! তুমি মানুষ হবা না? ভাবিরা নাকি সবাই হেসে ফেলছে! আর বাসায় নাস্তার বিল কি তোমার নানী নিবে? রাইসা মাইন্ড করছে খুব।
- মাইন্ড করলে আমার কি?
- তোমার কি মানে? ও আমার বান্ধবী। আর তোমাকে না বলছিলাম আন্টির সাথে দেখা করতে। আন্টি তোমাকে দেখবে বলেছে। বাসায় গিয়েছিলা?
- আমি কি চিড়িয়াখানার জন্তু? দেখার কি আছে?
- উফ! আমি তাদের একমাত্র মেয়ে। তারা কি না দেখেই আমাকে বিয়ে দিবে?
- দেখবে না কেন? তারা কি অন্ধ নাকি?
- অসহ্য! তুমি তোমার বাবা মাকে বলেছো আমার কথা?
- উনারা কানে শোনেন না!
- সে কি! কবে থেকে?
- যেদিন আমাকে বাসায় বিয়ের কথা বলতে বলছো সেদিন থেকে।
- ওহ! খোদা! তুমি মানুষ হবা না?
- আমি কি অমানুষ নাকি?
- উফ! তোমায় নিয়ে আর পারি না!
- আমার সাথে পেরে ওঠার এত শখ কেন?
- শখ না খায়েশ।
- কিসের খায়েশ?
- তোমার চুলগুলো টেনে তোলার।
- তোমার সামনে এলে তো তুলবা!
- কতদিন না এসে থাকবা?
- যতদিন তোমার বাপে যৌতুক দিতে রাজি না হয়!
- অই!
- কি?
- তোমাকে কিন্তু চাবাইয়া খেয়ে ফেলব যদি সামনে পাই!
- কয়দিন হলো ভাত খাও না?
- উফ! অসহ্য! তোমার কি কিছুতেই সিরিয়াসনেস নাই?
- আছে তো।
- কিসে?
- অই যে তুমি আর মেজো ভাবির সাথে লুডু খেলার সময়।
- আমার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে গেলে বুঝবা! কি করবা তখন? হু?
- ভিক্ষুককে টাকা দিব।
- কেন?
- আমাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে পারবানা তাই!
- রক্ষা কর মাবুদ! মাফ চাই! ভালোভাবে কথা বলো প্লিজ! প্লিজ!
- আশেপাশে কেউ নাইতো, কার সাথে বলব?
- আমার সাথে?
- তোমাকে তো মেসেজ লিখি!
- জান বলছি! প্লিজ এমন করে না।
- কেমন করি?
- উফ! অসহ্য! আমার মাথা! মুণ্ডু! মুড়ি খাও তুমি বসে বসে!
- তুমি ভেজে দিও তাহলে। বয়ামে ভরে রাখবনি।
- শয়তান! তোমাকে যদি সামনে পাইতাম...! আচ্ছা বাবু' আসো আজ বিকেলে দেখা করি একটু?
- নাহ!
- কেন?
- তুমি মাইর দিবা!
- নাহ! দিব না। দরকার আছে একটু প্লিজ?
- আমার সময় নাই বিকেলে।
- কেন কি করবা?
- ওই তো আমাদের পাশেরবাড়ির মেয়ে নাবিলা, যে আমাকে ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড দিয়েছিলো ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাব ফয়েজলেকে।
- অই! আমি কিন্তু তোমাকে খুন করে ফেলব!
- তাহলে আমার নাবিলার কি হবে?
- তোমার নাবিলা মানে?
- আমার আম্মুর তো নাবিলাকেই পছন্দ। আম্মুকে ছবি দেখিয়েছিলাম নাবিলার। আম্মা বলল, কি মিষ্টি মেয়ে!
- তোমাকে না এমন মিষ্টি খাওয়াব! বাকি জনমে আর মিষ্টি মিষ্টি করবেনা!
- শোনো মেঘলা! এত কথার দরকার নাই। তোমার সাথে ব্রেক আপ আমার এখন! এই মুহুর্ত থেকে।
- কী!
- হ্যাঁ।
- ঠিক আছে। ব্রেক আপ হলে ব্রেক আপ, এবার নাহয় একটু আসো।
- গাড়িটা ডিস্টার্ব দিচ্ছে, আমার কাছে ১০০০ টাকার নোট। রিকশা ভাড়া দেয়ার জন্য খুচরা টাকা নাই । তুমি এসো, আর হে আসার সময় তোমার ওই টুকটুকে লাল শাড়িটা নিয়ে এসো।
- আচ্ছা তুমি থেকো, আমি আসছি।
.
শেষ বিকেলে কলিং বেল বাজতেই আকাশ দরজা খুলে দিল। দেখে মেঘলা দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটা প্যাকেট। মেয়েটা কি এক দুপুর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে, নাকি রেগে আগুন হয়ে আছে? বুঝার উপাই নেই, চোখমুখ লাল হয়ে আছে, মেঘলার চাহনিতে আকাশের সর্বনাশ দেখতে পাচ্ছে, আজকে নির্ঘাত পটল তোলবো তাতে সন্দেহ নেই।
মেয়েটা এত পাগল!
- আরে মেঘলা' তুমি এসেছো নাকি? ভিতরে এসো।
- চোখে কি প্রবলেম আছে? দেখতে পাচ্ছো না?
- তা পাচ্ছি, তো তোমার হাতে কি?
- শাড়ি।
- ড্রাই ওয়াশ করে এনেছো তো?
- মানে?
- নাবিলাকে তো আবার এটাই দিব ভাবছি।
- আরে বদের হাড্ডি! এটা শাড়ী না, এটা তোমার মাথা' মুণ্ডু টি-শার্ট। দাঁড়াও আজকে তোমার একদিন কি আমার একদিন।
মেঘলা হাতের প্যাকেটটা ছোড়ে মারলো।
- বউরে এমন করেনা, আর বলব না, এবারের মত মাফ করে দাও প্লিজ।
কার কথা কে শুনে, মেঘলা তখন আকাশকে দৌড়াই ছুটলো, আকাশ দৌড় দিতে গিয়ে হুচট খেয়ে খাটে পড়ে গেল।
- জাদু মনি' এবার যাবে কই?
আজকে তোমারে পাইছি, একদম খুন করে ফেলবো।
এই বলে মেঘলা খাটের উপর উঠে আকাশের পেটের উপর বসে গলাটা চেপে ধরলো।
- বাঁচাও! বাঁচাও..!! আব্বুগো আম্মুগো কে কোথায় আছো, আমি মরে গেলাম গো।
..
ভোর বেলা হঠাৎ আকাশের চিৎকার শুনে ওর আম্মু তড়িঘড়ি করে আকাশের রুমে এসে দেখে আকাশ গলায় হাত দিয়ে চিৎকার করতেছে।
- ওই ফাজিল ছেলে" সাজ সকালে এভাবে ষাঁড়ের মত চেঁচাচ্ছিস কেন?
আম্মুর বকুনি খেয়ে হঠাৎ আকাশের শান্তির ঘুমটা ভেঙে গেল। চোখ মেলে দেখে ওর আম্মু খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে, আর আব্বু নিজের রুমে চলে যাচ্ছে।
- আম্মু' কি হয়েছে? এত সকাল সকাল এভাবে বকা দিচ্ছ কেন? আমি কি করেছি?
- মানে কি?
- কি?
- ওই বান্দরের পোলা বান্দর, আমি এমনি এমনি বকা দিচ্ছি না? এই ভোর বেলা যেভাবে চেঁচাচ্ছিস মনে হচ্ছে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লেগেছে। কি হয়েছে? আর গলায় বা হাত কেন?
অহ তাই তো, আকাশ নিজ হাতে এখনো গলাটা ধরে আছে, সারা শরীর ঘেমে একাকার। হাত পা ছোটাছুটির কারণে ব্লাংকেটটি ফ্রোরে পড়ে আছে। হটাৎ সপ্নের কথা মনে পড়তেই তাড়াতাড়ি গলা থেকে হাত নামিয়ে ফেলল, লজ্জাই মুখটা লাল হয়ে গেল, মাথাটা নিচু করে বলল,
- ও কিছু না আম্মু, তুমি যাও।
- পানি খাবি?
তারপর ওর আম্মু ফিল্টার থেকে এক গ্লাস পানি খাওয়াই দিয়ে ব্লাংকেটটি তোলে গায়ের উপর চাদরটা টেনে দিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
- টিক আছে বাবা' ঘুমিয়ে পড়।
আম্মু চলে গেল, রুমে ডুকতেই ওর আব্বু বলল,
- ছেলেটার কি হল?
- আর বলোনা' ছেলেটা বোধহয় সপ্ন দেখে ভয় পেল।
- খোকাটা এখনো সেই ছোট্র খোকাই রয়ে গেল।
- যেমন বাবা তেমন ছেলে, ছেলেটা বড় হয়েছে, এখনো ঘুমের মধ্যে ভয় পায়।
- খোকা তো ভয় পাবে, তো ওর সাথে আমাকে পেছাও কেন?
- তুমিও কি কম জ্বালিয়েছ?
আকাশের বাবা বুলবুল সাহেব এবার মুচকি হেসে বললেন,
- ছেলেটা যে কবে বড় হবে! এখনো ছেলেবেলার স্বভাব গেলনা।
- বিয়ের পরে বউমা পালবে, আমি আর পারব না।
- তোমার যে খোকার খোকা, তোমাকে নিস্তার দিবে বলে তো মনে হয়না।
- কেমনে দিবে' তুমি তো খোকাটার কাছে জম।
- খোকার ভয় পাওয়াটাও যে ভাল লাগে নাজমা, এতে কিছুর পরেও যে আমার খোকাটাকে বড্ড ভালবাসিরে।
.
এদিকে আকাশের আর কিছুতে ঘুম আসছেনা, মনেমনে ভাবতে লাগল উল্টা পাল্টা এ কেমন সপ্ন দেখল, এরকম তো হওয়ার কথা নয়, মেঘলার সাথে কইদিন পরেই তো তার বিয়ে, তাছাড়া সপ্নের কিছুই তো তার সাথে ঘটেনি, তার মানে কি? এসব ওরা শুনলেই বা কি ভাববে? হারামী গুলো তো তাকে পাগল করেই ছাড়বে। দূর ছাই' মাথায় কিছু আসছেনা। তারপর কিছুক্ষণ বিছনায় গড়াগড়ি করে উঠে আকাশ নিজের ডায়রিটা হাতে নিল, সেখানে লিখল,
মেঘলা হাসে, মেঘলা কাঁদে, মেঘলা রাগে,
মেঘলার চোখ অভিমানে জলে ভিজে,
আমার এত বেশি ভালো লাগে!
তারপর ডায়রিটা রেখে দিয়ে ফ্রেস হয়ে নাস্তা সেরে একটু বের হল।
হটাৎ দেখে মেঘলার মেজো ভাইয়ের ফোন।
- হ্যালো আকাশ?
- জ্বি স্যার, আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম সালাম, তুমি কি ফ্রি আছ?
- এই তো স্যার একটু বের হলাম, তবে কোন কাজ নেই আপাতত অফিসে যাওয়া ছাড়া।
- অহ আচ্ছা' আজ অফিসে যেতে হবেনা তোমার, যদি সময় পাও তবে তোমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে একটু বাসায় আসতে পারবে? কিছু কথা ছিল।
- জ্বি স্যার, অবশ্যই আসবো।
- আচ্ছা ভালো থেকো।
লাইন কাটার পর আকাশ অন্য ফোনটা বের করল শরীফ ও রানাকে ফোন দেয়ার জন্য। এমন সময় পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো..
- দোস্ত' তুই তো অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেছিস। তোকে তো আর চোখেই দেখিনারে। (শরিফ)
পিছন ফিরে দেখে শরিফ দাঁড়িয়ে।
- তাহলে কি আমাকে এখন কান দিয়ে দেখছিস নাকি নাক দিয়ে? (আকাশ)
- ধূর বেটা কথা পেঁচাবি না। শোন তোর সাথে জরুরি কথা আছে।
- কান খোলা আছে বলে ফেল।
- এহেন মোর বড্ড খিদা পাইছে, তয়' তোর বাসায় যাচ্ছি তক্তা বিস্কুট খাইতে।
- অহ এই কথা? আমি তো মাত্র ফোনটা হাতে নিলাম তোদের ফোন দিতে। তুই আসলি ভালই হল।
- কেন? কোন সুখবর আছে নাকি?
- হুম' আছে।
- সে কি?
- তক্তা পিটা!!"
- অহ মোর আল্লাহ' মুই কিন্তুক এখন দৌড় দিমু।
- কেন?
- আমি খাইতে চাইলাম তক্তা বিস্কুট, তুই খাওয়াবি তক্তা পিটা, তো কি করাম।
- কিছু করা লাগবে না, রানারে একটা ফোন দে?
- কি বলতাম?
- বলবি আজ তোর বিয়ে, সবাই মিলে বিরানি খামু, সাথে দৌড়ানি থাবড়ানি ফ্রি...!!
- দূর হারামি' তর জ্বালাই বিষ খামু,
- আমি কিনে দেই?
- লাগবেনা নে তোর বিষ, আমি রানারে বলি, সে নিয়ে আসবে।
এবার শরিফ রানাকে ফোন দিল।
- রানা সাহেব বলছেন?
- জ্বি ভাই বলুন, আপনার জন্য কি সেবা করতে পারি।
- ভাবছি আমরা আপনার সেবা করুম, তয়' একটু আকাশ সাহেবের বাসার দিকে আসতে পারবেন?
- টিক আছে গেলাম, কিন্তু কারণটা বলবেন?
- জ্বি' তা হল মহা কারণ, তক্তা পিটা খাওয়ামু।
- হায় হায় বলেন কি ভাই, এমনিতেই সারাদিন বউটার সেবা করতে করতে জীবন তামার খনিতে পরিণত হয়ে গেছে।
- অহ আচ্ছা' তাহলে তক্তা বিস্কুট খাওয়ামু, আসেন।
- আচ্ছা ভাই আপনারা এক মিনিট দাঁড়ান, আমি দুই মিনিটের মধ্যে আসতেছি।
- আচ্ছা আপনি আসেন, প্রয়োজনে দশ মিনিট দাঁড়াচ্ছি।
- আচ্ছা আসছি ভাই।
শরিফ ফোন কেটে দিল, কিছু সময় পর রানা এসে উপস্থিত হতেই শরিফ আকাশকে বলল,
- এবার চল দোস্ত, জন্মের খিদা পাইছে।
- আচ্ছা চল।
রানা আগে আগে আকাশদের বাসার দিকে যেতেই, আকাশ বলে উঠলো,
- ওই বেটা ঐদিক কই যাস? এদিকে যাবি!
- আরে দুর' সেদিকে তো তোর শ্বশুরালয়।
- সেখানেই তো যাচ্ছি, বলছি না তক্তা পিটা খাওয়ামু?
- মানে কি? সকাল সকাল!!"
- কিছু না, চুপচাপ চল, নাহয় কানের নিচে দুইটা দিমু।
- আচ্ছা ভাই আমি একদম চুপ।
তারপর ওরা মেঘলাদের বাসার দিকে রওয়ানা হল। বিভিন্ন গল্প গুজব করতে করতে কখন যে ওরা মেঘলাদের বাসায় চলে এসেছে কেউ টেরও পাইনি, ওরা সারা রাস্তা বাঁদরামো করতে করতে আসে, এর ফাঁকে আবার কালামকেও ফোন দিয়ে মেঘলাদের বাসায় আসতে বলল, কিছু সময় পর সবাই উপস্থিত হয়ে একসাথে বাসায় প্রবেশ করল, তারা এসেছে টিকই, তবে কেউ জানেনা কেন তাদের এখানে আসা, আকাশও কাউকে কিছু বলেনি।
....
ওরা গেস্ট রুমে বসে আছে, একটু পর মেঘলা আসে চোখ মুছতে মুছতে। আকাশকে বলল,
- আরে' তোমরা কখন এলে? একটা ফোনও তো দিলেনা।
- কেমনে দেই, তোমার ফোন তো স্টপ।
- কি বলো?
- তাই তো বলতেছে ফোনে,
- আচ্ছা তোমরা বসো, আমি নাস্তা রেডি করাচ্ছি,
কিছুক্ষণ পরে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা রেডি করে সবাইকে ডাকল,
ওরা ডাইনিংএ গিয়ে দেখে অন্যান্য নাস্তার সাথে টোস্ট বিস্কিটও হাজির, তা দেখে সবাই হাসতে হাসতে শেষ।
ওরা হঠাৎ হাসতে দেখে মেঘলা রীতিমত অবাকই হয়ে গেল,
- কি হল? তোমরা এভাবে হাসছ কেন?
- শরীফ সাহেবের তক্তা বিস্কুট এখানে এলো কিভাবে? উনাকে তো তক্তা বিস্কুটের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসছি।
- তোমরা আসবা শুনে ভাইয়া একগাদা টোস্ট নিয়ে এসেছে।
- উনি কেমনে জানেন?
- হি হি হি... ভাবি বলছে হয়ত।
কথাটা শুনে সবাই সে কি হাসি, তা দেখে রানা দুষ্টুমি করে খ্যাপানোর জন্য এবার শরিফকে বলল,
- তোরা আমার ইজ্জত রাখবি না নাকি?
- আরে যাহ, কি কও না কও, তোর একটা ইজ্জত আছেনা, আমরা কি এমন করতে পারি বল? আচ্ছা রাগ করিস না দোস্ত, টোস্ট সব গুলো তোর জন্যই বরাদ্দ রাখলাম, তবুও রাগিস না।
- কাইন্দা দিমু কিন্তুক।
- চকলেট কিনে দিমু।
তারপর হাসতে হাসতে মেঘলা চলে যেতেই একটু পরে মেঘলার মেজো ভাইয়া আসে। উনাকে দেখে সবাই সালাম দিলেন,
- আরে তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেল কেন? বসো, বসো।
তারপর সবাই মিলে নাস্তা সেরে নিলেন, এর মাঝে সবার পরিবার পরিজনের ভালমন্দ কৌশল বিনিময় শেষে মেজো ভাইয়া বললেন।
- বিয়ের ব্যপারে সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে?
- জ্বি স্যার।
- তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে, বিয়ের সম্পূর্ণ আনুষঙ্গিকতা একই স্টেজে হবে বলেই সিদ্ধান্ত হল, আমাদের বাসায় জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, তোমার প্রয়োজনের বাইরে কিছু করার দরকার নেই। টিক আছে?
- জ্বি স্যার।
- সবাইকে ইনভাইটেশন শেষ, বিয়েতে দুই পরিবারের নামীদামী গেস্ট আসবে, তা তো তোমরা জানোই, গতবারের মত আনুষ্ঠানিক গেস্ট দায়িত্বটা আমি তোমার বন্ধুদের দিতে চাই, যদি কারো আপত্তি না থাকে!!
কথাটা শুনে আকাশ তার পাশে বসা শরিফ রানা ও কালামের দিকে তাকাই,
কথায় আছে বান্দর বৃদ্ধা হলেও গাছে উঠে,, শরিফ হঠাৎ বলল,
- কারো আপত্তি না থাকতে পারে মাগার' আমার আছে, গতবার কিন্তু তোর কাছে দুই টাকা পাই, চকলেট কিনে দিবি বলে দিস নাই।(মিনমিন করে বলল আকাশকে, যাতে মেজো ভাইয়া না শুনে)
- তরে কিন্তু এখন চিবাইয়া খেয়ে ফেলব হারামি কোনহানের।
তারপর শরিফ বলল,
- কি যে বলেন স্যার, এটা তো আমাদেরই কর্তব্য, এখানে মনে করার কি আছে, আপনি কোন চিন্তা করবেন না স্যার, আমরা সব সামলে নিবো।
- আচ্ছা টিক আছে, তোমরা গল্প করো। আমি আসছি।
এই বলে উনি ভেতরে চলে গেলেন।
এবার শরিফরে পেয়ে বসল।
- অই বেটা ফাজিল' তুই কি মানুষ হবিনা?
- আরে বাবা! আমি আবার কি করলাম?
- কি করলাম মানে? কি করিস নাই তাই বল? কথাটা যদি ভাইয়া শুনতো তাহলে উনি কি মনে করতেন?
- কি আর মনে করতেন, আমার দুই টাকা আমি পেয়ে যেতাম।
- তরে যে আমি কি করি এখন, দাঁড়া! দেখাচ্ছি মজা।
এই বলে শরিফকে দৌড়াই ছুটলো,
- এবার আমি কাইন্দা দিমু কইলাম।
এই বলে শরিফও দৌড় দিতেই দেখে সামনে মেঘলা।
- ম্যাডাম আমারে বাঁচান, হারামিটা নাহয় আমারে মেরে ফেলবে।
- What's problem?
- I'm sorry. It's I who made the mistake first. আসলে হয়ছেটা কি' আমি গ্লাসে পানি নিতে গিয়ে ওর গায়ে একটু পানি পড়ল, তাই ও আমাকে...!
- It's all right. You didn't do it intentionally.
- Oh, that doesn't matter, really.(রানা)
- অই বেঠা' তুইও সাই দিলি? জানিস ও কি করেছে?(আকাশ)
- কি করেছে?
তখন আকাশ সব কিছু খোলে বলতেই সবাই হেসে উঠলো। তারপর কিছুক্ষণ গল্প গুজব শেষে মেঘলা বলল,
- ভাইয়া তোমাদের লাঞ্চ সেরে যেতে বলেছে, তোমরা রুমে গিয়ে গল্প করো, আমি একটু আসছি।
তখন ওরা গেস্ট রুমে ফিরে গেল। কিছুক্ষণ পর গেস্ট রুমে দিহান এলো।
- ওমা' আমার আব্বাজান এসেছে নাকি?
কথাটা বলতে বলতে আকাশ ওকে কোলে নিয়ে নিল।
- আপ্পিমনি আপনাকে ডেকেছে!
- তোমার আপ্পিমনি কোথায়?
- উপরে আছে,
তারপর আকাশ দিহানকে কোলে নিয়ে উপরে গেল মেঘলার রুমে। গিয়ে দেখে মেঘলা টেবিলে বসে আছে, সামনে বই খাতা খোলা,
- কিরে মনি' লেখাপড়া আবার শুরু করে দিলা নাকি?
- হুম' দেখতেই তো পাচ্ছো।
- টিউটর তো নাই!
- নেই তো কি হয়েছে, তুমি তো আছো।
- আমিও মনে মনে খোঁজতেছি তোমার মত স্টুডেন্ট।
- তাহলে তো ভালই হল, বসো, পড়াও তো দেখি।
তারপর আকাশ চেয়ার টেনে ভাল মানুষের মত বসল, দিহানকে পাশের চেয়ারে বসালো। তারপর বলল,
- আমি দুয়েকটা Sentence বলব, আর তুমি সেগুলোর বাংলা অনুবাদ করবে, টিক আছে বেবি?
- আচ্ছা টিক আছে।
তখন আকাশ বলা আরম্ভ করল। আচ্ছা বল তো-
- Too much cunning overreaches itself. এটার অর্থ কি?
- অতি চালাকের গলাই ঘড়ি।
মেঘলার উত্তর শুনে আকাশ ভেবাচেকা খেয়ে গেল, শুকনা গলাই ঢুক গেলার ব্যর্থ চেষ্টা করে, তারপর নিজেকে কোন রকমে সামলে নিয়ে বলল, এবার বলতো:-
- Education is the backbone of a nation. এটার অর্থ?
- শিক্ষা জাতির মৃত্যুদণ্ড।
.
মেঘলার উত্তর শুনে এবার আকাশ রীতিমত বেহুশ, মনে হচ্ছে মাথাটা কেমন যেন ঘুরাচ্ছে, কি আজব মেয়েরে বাবা, সে জিগাই কি আর মেয়েটি উত্তর দেয় কি? আকাশ চুপ করে আছে দেখে মেঘলা হাসতে হাসতে বলল,
- স্যার, আপনি চুপ মেরে আছেন কেন? আপনার Sentence আর কই?
- মনি আমার দ্বারা আর পসিবল না, মনে হচ্ছে মাথাটা ঘুরাচ্ছে, আমাকে একটু ধরো।
মেঘলা গিয়ে দুষ্টুমির ছলে আকাশকে ধরতে দেখে দিহান তাড়াতাড়ি নিচে নেমে সোজা গেস্ট রুমে গেল!
দিহানকে দেখে শরিফ কোলে নিয়ে নিল,
- আংকেল আপনি আবার নিচে এসেছেন কেন?
- জানেন" আকাশ আংকেল ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেছে।
দিহানের কথা শুনে তো সবাই অবাক, কি বলে ছেলেটা, মানে কি? তারপর ওরা তাড়াতাড়ি দিহানকে নিয়ে উপরে গেল, গিয়ে দেখে আকাশ খাটের উপর শুয়ে আছে।
- কিরে ম্যাডাম' আকাশের কি হয়েছে?(রানা)
মেঘলা হেসে উঠে বলে,
- বলতে পারব না তবে টেবিলের উপর খাতায় লিখা আছে, চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
তখন রানা টেবিল থেকে খাতাটা নিয়ে খাতার উপর চোখ বুলালো। পরক্ষনে রানার মাথাটা হ্যাক হয়ে গেল, রানাকে বসে যেতে দেখে শরিফ বলে উঠলো,
- কিরে রানা" তোর আবার কি হল?
- মোর মাথাডা দেহি ঘুরাই কেরে!!
- অহ মনু' ছোপাড় খাইলে ওপাড় যাবি। সোজা হয়ে দাঁড়া বলছি, নইলে কিন্তু আমি পানি নিয়ে আসতেছি। বেটা দুইটারে গঙ্গার জল দিয়ে স্নান করামু।
শরিফের কথা শুনে আকাশ উঠে সোজা হয়ে বসল, নাহয় হারামীটা সত্য সত্য পানি মেরে দিবে।
- কিরে আকাশ' কি সমস্যারে তোর? তুই নাকি মাথা ঘুরাই পড়ে গেলি?
- আরে দূর, কে বলছে তোরে? আমি তো মেঘলার সাথে দুষ্টুমি করছিলাম।
- আমাদের আব্বাজানই তো খবরটা দিল।
- আব্বাজান তো ছোট মানুষ, এত কিছু কি আর বুঝে? আমাকে পড়ে যেতে দেখে ও ভয়ে তোদের ডাকতে গেল আর কি?
- অহ আচ্ছা। তো ব্যাপার খানা কি একটু শুনতে পারি?
তখন আকাশ কথা গুলো খোলে বলতেই শরিফ বলে উঠলো,
- দোস্ত, মনে হচ্ছে এখন তো মাথা আমারই ঘুরাইতাছে।
পরে ওরা এটা নিয়ে অনেক্ষন আনন্দ উল্লাস করে দুপুরের লাঞ্চ সেরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যার যার বাসায় ফিরে গেল।
.
বিয়ের মাত্র দুই দিন বাকী, আকাশ আত্মীয় স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে, বন্ধু বান্ধব সবাইকে দাওয়াত শেষে শরিফ ও রানাকে নিয়ে অনুষ্ঠানের যা যা করনীয় সব আয়োজন রেড়ি করে নিল। একমাত্র ছোট বোন তন্নিকে নিজে গিয়ে নিয়ে এলো, সারা দিনের ক্লান্ত শেষে আকাশ নিরব হয়ে রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়ে।
-
------চলবে------
-

No comments

জনপ্রিয় পোষ্ট

  জন্ম নিবন্ধন করবেন ভাবছেন, আর ভাবনা নয় সপ্ন এখন সত্যি সব এখন হাতের মুঠোয়, [ http://bdris.gov.bd/br/application ]( http://bdris.gov.bd/br...

Powered by Blogger.