শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. রেজাউল হক (৪০) পেশায় একজন ভিক্ষুক। দুর্ঘটনায় নিজের একটি পা হারানোর পর চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলে তার সংসার। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন হিলভিউ রংপুর কলোনীতে। চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসের কারণে অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে বাসা থেকে আর বের হতে পারেননি রেজাউল। থেমে যায় রোজগার। যে কলোনীতে তিনি থাকেন সেখানকার সবাই পেশায় হয়ত রিকশাচালক, নয়ত দিনমজুর। সব বন্ধ থাকায় তাদেরও উপার্জন বন্ধ। এদিকে, তারা পাননি কোন ত্রান কিংবা সাহায্য। ফলে অনাহারে, অর্ধাহারে জীবন কাটছে তাদের। প্রতিবেশীর এ কষ্ট সহ্য হয়নি রেজাউলের। গত কয়েক মাসে ভিক্ষা করে জমিয়েছিলেন ১২ হাজার টাকা। সিদ্ধান্ত নিলেন সে টাকা দিয়েই প্রতিবেশিদের করবেন সাহায্য। অন্য কারো ত্রানের আশায় বসে না থেকে নিজের এ জমানো টাকা দিয়েই ৬০ জন প্রতিবেশিকে দিলেন চাল, আলু আর সাবান।
গতকাল শনিবার (৪ এপ্রিল) রংপুর কলোনীর সামনে ৬০ জনের কাছে রেজাউল নিজ হাতে তুলে দেন এসব ত্রান। ত্রানের মধ্যে ছিল ৪ কেজি চাল, ১ কেজি আলু ও একটি সাবান। ত্রান পেয়ে খুশি পুরো কলোনীর মানুষ। একজন ভিক্ষুক হয়ে প্রতিবেশীদের ত্রাণ বিতরণে এলাকায়ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, রেজাউলের গ্রামের বাড়ি রংপুরের লালমনিরহাট জেলায়। ৯ বছর আগে চট্টগ্রামে এসেছিলেন ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে। তবে কোন কাজ না জোটায় ভিক্ষা করেই চালাচ্ছেন নিজের পরিবার। তবে অর্থের দিক দিয়ে দরিদ্র হলেও রেজাউলের মনটা যে অনেক বড় তা প্রমাণ করলেন দুঃসময়ে প্রতিবেশীদের পাশে থেকে। 
জানতে চাইলে রেজাউল বলেন, আমি ভিক্ষা করে সংসার চালাই। আমার প্রতিবেশীরাও দিন এনে দিন খায়। ভাইরাসের কারণে সবার উপার্জন বন্ধ। আমাদের এখানে কেউ কোন ত্রাণও দেয়নি। আমার হাতে কিছু জমানো টাকা ছিল। তাই ভাবলাম, প্রতিবেশীদের সাহায্য করি। আমি একা খাবো, আর প্রতিবেশীরা উপোস থাকবে বিষয়টা ভাবতে পারছিলাম না। আজকে তাদের আমি সাহায্য করলাম, হয়ত একদিন তারাও আমার বিপদে এগিয়ে আসবে। সবাই মিলে এ যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।
ত্রাণ পাওয়া রিকশাচালক মো. নাজির হোসাইন বলেন, রেজাউল আমাদের যে সাহায্য করল সেটা সারাজীবন মনে থাকবে। এ খাবারগুলো দিয়ে অন্তত এক সপ্তাহ আমাদের চলে যাবে। রেজাউলের মত বিত্তবানরা যদি আমাদের কথা একটু ভাবত তাহলে আমাদের আর না খেয়ে থাকতে হত না।
হয়ত রেজাউলের সামর্থ্য কম, ত্রাণের পরিমাণও বেশি নয়। কিন্তু একজন ভিক্ষুক হয়ে যে মহানুভবতা তিনি দেখালেন তা অবশ্যই বিরল। এ কঠিন সময়ে সরকারের পাশাপাশি এলাকার বিত্তবানরা যদি তাদের দরিদ্র প্রতিবেশীদের একটু খোঁজ নিতেন তাহলে ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে কাউকে হয়ত রাত কাটাতে হত না।