স্নেহের রুদ্র
স্নেহের রুদ্র
জানিনা, আমার এ চিঠি কখনো তোমার হাতে পৌছুবে কিনা!
আজ তোমাকে খুব মনে পরছে!
সেই কখন থেকে তোমার ছবিটা হাতে, বার বার চোখটা ভিজে উঠছে! পাশের মানুষগুলো গভীর ঘুমে বিভোর। অথচ আমার চোখে ঘুম নেই!
কেমন আছো খোকা? কতদিন তোমায় দেখিনা!
তুমি হয়তো জাননা, গেল বছর তোমার মা চলে গেল! যাওয়ার আগে তোমায় দেখার সে কি বায়না হতভাগিনীটার! আমি বলেছি খোকা এখন ব্যস্ত! কত কাজ তার! মায়ের মন তো! সে কি আর বোঝে!
রুদ্র, বউমা আর সোনাবাবু কেমন আছে? ওদের খুব মনে পরে! সোনাবাবু কি দেখতে ঠিক তোমার মত? বড় স্বাধ জাগে দেখার!
খোকা, একটা কথা! তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো? বউমাকে দেওয়ার মত কিছু ছিলনা যে আমার! মনে আছে তোমার খোকা, যে বছর আমার চাকরী চলে গেলো, তোমার সে কি পেট এ ব্যথা উঠলো! অর্থ অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। বউমার জন্য রাখা তোমার মায়ের সোনার কাঁকন দুটো তখনই বেঁঁচে দেই। মনে কষ্ট রেখনা খোকা!
তোমার পেট এর ব্যথাটা কি এখনো হয়? ভালো ডক্টর দেখিয়ো।
মনে পরে খোকা, রাতে ঘুমানোর আগে তোমার চুলে বিলি না কাটলে তুমি ঘুমাতেই পারতেনা! রাতভর জেগে থাকতে! কতদিন সংসারের আর অফিসের নানান ব্যস্ততায় তোমাকে বিলি কেঁটে দিতে পারিনি। আজ এত অবসর সময় আমার! আজ তোমায় খুঁজে পাই কোথায়! পাশের রুমের কিরণের চুলে প্রায়ই বিলি কাটি সন্ধ্যা নামার মুখে। কিন্তু তোমার চুলের ঘ্রানতো পাইনা!
রুদ্র, একটা কথা! তোমাকে দেখার বড় ইচ্ছে হয়।
আমি জানি তুমি এখন মস্ত বড় হয়েছো। মন যে মানে না খোকা! যদি কখনো সময় করতে পারো, এসে একবার দেখে যেও। প্রতি ভোরে চোখ মেলার আগেই তোমাকে দেখার চেস্টা করি কল্পনায়। চোখ মেললেই নাগরিক কোলাহলের ভিড়ে স্মৃতিরা ঝাপসা হতে থাকে।
তোমায় আর দেখিনা!
জানিনা আর দেখা হবে কিনা!
তুমি নিজের যত্ন নিও। সময় মত খেও।
বউমা কি জানে, তুমি ঘুমের মাঝে বার বার গায়ের কাঁথা সরিয়ে ফেলো! কখনো দেখা হলে, বউমাকে বলে দিতাম।
আবারো চোখটা ঝাপসা হয়ে উঠছে! কি যে হয়েছে আজকাল! যতই চোখ মুঁছি, বার বার ভিজে উঠে!
নাহ খোকা, ভেবনা তোমার জন্য মন খারাপ করছি। বয়স হয়েছে তো!
আমি ভালো আছি। তুমিও ভালো থেক।
আজ আর লিখব না রুদ্র!
বিদায় নিলাম!
ইতি
তোমার বৃদ্ধ বাবা।
বৃদ্বাশ্রম থেকে।
No comments