Header Ads

Header ADS

>" তৃপ্ত ছায়া "<,

>" তৃপ্ত ছায়া "<,
-
-------- " পর্ব ছাপ্পান্ন",
-
বিয়ে উপলক্ষ্যে মেঘলাদের আটতলা বিশিষ্ট বিশাল বাড়িটার সাথে সামনের গলিটাও জাঁকজমক ভাবে সাজানো হয়েছে। চৌধুরী পরিবারের একমাত্র মেয়ের বিয়ে, তাই বাসায় জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল, একটু পর দূর দুরান্ত থেকে গেস্ট আসা শুরু হবে, তখন ইচ্ছে করলেও আর রেস্ট করা পসিবল হবেনা, তাই সবাই নাস্তা সেরে রুমে গিয়ে রেস্ট করছে, মেঘলাও অনন্যাদের সবাইকে নিয়ে নিজের রুমে ফিরে গেল।
কিছুক্ষণ পরে মেঘলার বড় ভাই এম এ মনসুর চৌধুরী গেস্ট রুমে এসে আকাশকে বললেন।
- তোমার আব্বু আম্মুকে নিয়ে আসার কি কোন ব্যবস্থা করেছ?
- জ্বি স্যার, গাড়ি পাঠিয়েছি, উনারা একটু পরেই পৌছে যাবেন।
- এটা অফিস নই,
আকাশ এবার লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকিয়ে বলল,
- সরি ভাইয়া,
- তোমার বন্ধুদের পরিবারের সবাইকে আনার ব্যবস্থা করেছ?
- জ্বি ভাইয়া, গাড়ি পাঠানো হল, নিশ্চয় কিছুক্ষনের মধ্যে ফিরবেন।
- আচ্ছা টিক আছে, একটু নজর রেখো।
এই বলে উনি চলে গেলেন।
কিছুক্ষনের মধ্যে আকাশের বাবা মা এসে গেল, উনারা গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে ডুকতেই এম এ মনসুর চৌধুরী এসে আকাশের বাবা বুলবুল আহমেদ সাহেব ও মা নাজমা আহমেদ এবং উনাদের সাথে আসা ব্যক্তিবর্গদের শুভেচ্ছা জানালেন।
এবং দিহানকে পাঠালেন মেঘলাকে ডাকতে। তখন মেঘলা পরী ও অনন্যাদের সবাইকে নিয়ে রুমে বসে গল্প করছে, এমন সময় হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খোলতেই দেখে ওর ভাতিজা দিহান।
- আব্বাজান" কি ব্যাপার, আপনি এত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলেন?
- বড় পাপ্পা তোমাকে ডাকতেছে।
- কেন? কিছু বলল?
- এত্তগুলো আংকেল এসেছে।
- ওমা তাই?
দিহান মাথা নাড়াল, আজ দিহানকে বেশ মনমরা লাগতেছে।
- চল আপ্পিমণি।
- না" আমি যাবনা, আগে আমাকে কোলে নিতে হবে। তারপর যাবো।
- আমি পারিনা তো,
- তাহলে একটা পাপ্পি দিতে হবে।
এবার দিহান গেল আটকে, কোন উপায় না দেখে ছোট ছোট হাত দুটি দিয়ে মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে একটা পাপ্পি দিল,
- এই না হলে আমার আব্বাজান,
এই বলে মেঘলা ওকে কোলে নিয়ে অনেক গুলো আদর দিয়ে ওকে নিয়ে নিচে নেমেই দেখে" আকাশের বাবা বুলবুল আহাম্মেদ, মা নাজমা আহমেদ, সাথে কালামের শ্রদ্ধেয় শ্বশুর আব্বু পুলিশ ইন্সপেক্টর আক্তার হোসাইন ও উনার পরিবার এসেছেন। উনারা বড় ভাই ওবাইদ সাহেবের সাথে কথা বলতেছেন।
মেঘলা উনাদের দেখে সম্মানের সাথে পা ছোঁয়ে সালাম করলেন, তারপর ভাল মন্দ কৌশল বিনিময় শেষে দিহানকে নিয়ে গেস্ট রুমে গেল।
দিহানকে দেখে আকাশ ওকে মেঘলার কোল থেকে নিজের কোলে নিতে নিতে বলল,
- আরে আব্বাজান, আপনি এতক্ষণ কোথায় ছিলেন? আমি আপনাকে কত খোঁজছি।
কিন্তু ছেলেটি কোন কথা বলছেনা, মুখটা কেমন যেন ভার করে আছে, হলটা কি ছেলেটার? কেউ কিছু বুঝলনা, দিহানের মলিন মুখ দেখে শরিফ বলল,
- কিরে আকাশ, তোর শ্বশুর আব্বার মুখ মলিন কেন? ওর জন্য কিছু আনলি না নাকি?
- আরে কি বলিস, এনেছি তো,
এই বলে আকাশ ওর ব্যাগ থেকে একটা জামা ও ক্যাটবেরি চকলেট বের করে দিলেন, কিন্তু দিহান তাও নিলনা, এবার সবাই হতবাক হয়ে গেল, সবাই অনেক চেষ্টা করেও দিহানের মুখ থেকে কোন কথা বের করতে পারল না।
আকাশ আবার বলল,
- আব্বাজান আমি কি কোন ভুল করেছি? সরি বাবা' কান ধরি?
- আপনারা সবাই পঁচা আংকেল, আপনাদের সাথে কথা বলবো না।
- কেন বাবা, আমরা কি করলাম?
- আপনারা আজকে আপ্পিমনিকে বাসা থেকে নিয়ে যেতে এসেছেন।
- আরে বাবা' কে বলল, আমরা তো বেড়াতে এসেছি।
- মাম্মি আমাকে বলেছে। আপ্পিমনি নাকি আমাকে ফেলে চলে যাবে, আমি যেতে দেবনা।
- না বাবা' নিবোনা।
- মিথ্যে বলছেন, আংকেল খুব পঁচা।
এই বলে মেঘলার কোলে গিয়ে ওকে গলা জড়িয়ে ধরলো। মেঘলার চোখ দুটো জলে বারবার ভিজে ভিজে উঠছে, মনে হচ্ছে বুকটা ফেটে যাচ্ছে, তবুও এই ছোট মাসুম বাচ্চাটাকে তো আর বুঝতে দেয়া যাবেনা, তাই কোন উপায়ান্তর না দেখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
- তোমরা কি আমাকে সত্যি সত্যি নিয়ে যেতে এসেছো?
- আরে না, আমরা এমনিতে বেড়াতে এসেছি, বিশ্বাস করো।
ওরা সবাই এটা বলার পর মেঘলা এবার দিহানকে বলল,
- দেখেছ বাবা, ওরা আমাকে নিয়ে যেতে আসেনি, ওরা এমনিতে বেড়াতে এসেছে, আমি আমার আব্বাজানকে ছেড়ে কোত্তাও যাচ্ছিনা, তুমি এবার নিশ্চিন্তে গিয়ে খেলা করো।
এই বলে দিহানকে কোল থেকে নামিয়ে কপালে একটা আদর দিয়ে ছেড়ে দিল, দিহান তখন নিশ্চিন্তে গেস্টরুম থেকে খেলতে চলে গেল।
তারপর ওরা সবাই বসে গল্প করছে টিক এমন সময় পরী এসে হাজির,
- আপু, একজন ভদ্রমহিলা এসেছেন, তোমাকে ডাকছে।
মেঘলা বেরিয়ে দেখে কালামের বাবা মা ও বোন মৌমিতা এসেছে, উনাদের সাথে ভালমন্দ কৌশল বিনিময় শেষে আবার গেস্ট রুমে ফিরতেই শরিফ, রানা, অনন্যা ও ফাহিমের পরিবারবর্গের গেস্টরা একে একে সবাই আসা শুরু করল, এর কিছুক্ষণ পর বাহির থেকে গাড়ির শব্দ এলো, হয়ত কেউ এসেছে, গাড়ি থেকে নেমেই ওরা ভেতরে ডুকতেই মেঘলা দেখে নিত্য চন্দ্র, জাকির হোসাইন, বাবুল, ইসমাইল, শাওন, রনি সহ সবাই এসেছে। সাথে সানজানার বাবা মা ও বড় ভাই অন্তিম ও ভাবি এসেছে,
উনাদের দেখে আকাশ শরীফকে বলল,
- ওই বেঠা হারামি' তোর শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ির লোকজন এসে পড়লো, কি চাইলি তাড়াতাড়ি চল।
কথাটা শুনে সানজানা দৌড়ে গিয়ে আম্মু আব্বুকে জড়িয়ে ধরলো, শরীফ গিয়ে শ্বশুর শাশুড়িকে সালাম দিলো, মেঘলাও আন্টিদের সালাম করলো, সাথে সবাইকে কংগ্রেস জানালো। রানা ও অনন্যা সহ সবার পরিবার পরিজনকে সবাই সম্মানের সাথে সালাম বিনিময় করলো।
তারপর মেঘলা এবার বন্ধুদের সামনে গেল, মেঘলাকে দেখে নিত্য বলল,
- হায় ম্যাম, আমরা আইসা পড়ছি।
- Thanks a lot of my Friends. আরে নিত্য তোরা আসলি? অনেক খুশি হয়েছি? বস।
- তোর জন্যই তো ইন্ডিয়া থেকে এতদূর আসা।
- চল আগে কিছু খেয়ে নে।
- তোকে দেখেই তো পেঠ ভরে গেল।
- দূর হারামি, তাড়াতাড়ি চল, খুব ক্ষিদে পেয়েছে তোদের।
তারপর সবাইকে একসাথে মেহমানদারি শেষে সানজানার পরিবারের সবাই যেহেতু ইন্ডিয়া থেকে এসেছে তাই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়াই উনাদের রেস্ট এর ব্যবস্থা করা হল।
পরক্ষণে মুনসুর অাহম্মদ, Farid Shikdar, Furkan Raaz, আলমগির, ইদ্রিস, হাসেম, বাদল সরকার, হামিদ, সোহেল, বাসোদেব, ফয়সাল, ইব্রাহীম শিকদার, গিয়াস, রাজিব, সেকান্দার, মিজান, কাদের, সাগর, সনজয়, আজিম, মনজু সহ আরো অনেকেই উপস্থিত হল।
- Hi Madam.
- Hello Everybody, How are you friends? এসো ভেতরে এসো সবাই। আমি আজ সত্যি আনন্দিত।
- তোমার জন্যই তো আমরা মিছিল নিয়ে আসলাম। শেষ বিদায় দেবো বলে।
- হি হি হি... সত্যি অনেক খুশি হয়েছি।
তারপর ওনাদের গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে নাস্তা করাই দিল।
বিকেল শুরু হতেই আকাশ ও মেঘলাদের আত্মীয় স্বজন সবাই আসতে শুরু করেছে, দূর দুরান্ত থেকে নামীদামী গেস্টরা আসতেছে, তাই মেঘলার বড় ভাই ওবাইদুর রহমান চৌধুরী আকাশকে ডেকে বলল,
- গেস্টরা তো আসা শুরু করেছে, তোমার বন্ধুদের একটু দেখা শুনা করতে বলো।
- আচ্ছা ভাইয়া, আপনি একদম টেনশন করবেন না। আমি দেখছি।
কথাটা শুনে উনি ভাবে, আরে ছেলেটা বলে কি! আজকে ওকে দেখাশোনা করতে দশজন লাগবে, আর ও দেখবে এরেঞ্জাম? আর কিছু না বলে উনি মৃদু হেসে চলে গেলেন
উনার হাসি দেখে আকাশ বেশ লজ্জা পেয়ে গেল। তাড়াতাড়ি শরীফকে ফোন দিল,
- কিরে জামাইবাবু, কিছু বলবি?
- অই বেঠা কই তুই? আর ফাহিমই বা কই?
- মুই ছাদে। হেও ছাদে, কি বলবি তাড়াতাড়ি বল, মুই বেমেলা বিজি আছি।
- কি কাজে এত বিজি শুনি?
- ওই যে তোর শালিকাটাকে পটানোর চেষ্টা করতেছি আমি আর রানা মিল্লা।
- আরে রাখ তোর বিজি, তাড়াতাড়ি ফাহিমকে নিচে পাঠা।
- বললাম না বিজি আছি, তুই এসে ডেকে নিয়ে যা।
- তোর বিজির গুষ্টি কিলাই, দাঁড়া হারামী" আমি আইসা লই, তোরে আইজ ছাদ থেকে নিচে ফেলে প্লাইং শিখাব!
- ভাইরে, মাফ চাই, তোর আসা লাগবে নারে দোস্ত, আমি এক্ষুনি পাঠাচ্ছি।
তখন আকাশ হেসে ফোন কেটে দিল।
.
মেঘলা এদিকে বিয়ের পার্টির সময় ঘনিয়ে আসছে দেখে পরী, অনন্যা, সানজানা, তন্নি, রিয়া ও মৌমিতাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল, এমন সময় ফাহিম ছাদ থেকে নিচে নামতেই ওদের রুমের সামনে পরীর সাথে দেখা।
- আজকে তো চৌধুরী টাওয়ারে হুরপরীদের ঢল নেমেছে। কি ব্যাপার" আপনারা সাজুগোজু করবেন না ম্যাডাম?(ফাহিম)
- ওই ফাজিল ছেলে" আপনাকে এখানে আসতে কে বলেছে?(পরী)
- কেন? এখানে আসতে মানা আছে নাকি?
- একশবার মানা, এক্ষুনি চলে যান বলছি এখান থেকে। ফাজিল কোনহানের।
- যাহ" আর আসবো না,
- একদম আসার চেষ্টা করবেন না। জানে মেরে ফেলবো। বুঝলেন?
ফাহিম হাসতে হাসতে নিচে নেমে আকাশের কাছে গেল,
- ভাইয়া আমাকে কি ডেকেছেন?
- বাসায় তো গেস্ট আসতেছে, কালাম ও রানা কোথায় আছে দেখো, ওদের নিয়ে একটু গেস্টদের ভাল মন্দ তদারকি করো।
- আচ্ছা টিক আছে ভাইয়া।
এই বলে ফাহিম সেখান থেকে গিয়ে বন্ধুদের সবাইকে একত্রিত করে যার যার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে শরীফ রানা ও ফাহিম মিলে গলির একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করতেছে, এমন সময় শরিফের ফোনটা আবারো বেজে উঠলো। স্কিনে থাকিয়ে দেখে আকাশের ফোন।
- হ্যালো জামাইবাবু, দোস্ত কই তুই?
- আমি তো মঙ্গল গ্রহে, কই তোরা? তোদের তো দেখছিনা।
- আমরাও তো তোর কাছাকাছি আছি, তয় কিছু কবিনে?
- ভাবছি তোদের নলা গুলো কেটে সোপ বানামো, তারপর খামু।
- অহ মোর আল্লাহ, তো এই কথা আগে কবিনা? আচ্ছা দোস্ত' তুই একমিনিট দাঁড়া, আমরা দুই মিনিটের মধ্যে আইতাছি।
এই বলে ফোন কেটে দিয়ে ওরা তাড়াতাড়ি দোকান থেকে বাসায় ফিরে, সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে কয়েক কদম উঠতেই দেখে আকাশ উপর থেকে নামতেছে। তার সাথে যাকে নামতে দেখলো, তাকে দেখে ফাহিম নিজের শরীরের ভারসম্য আর ধরে রাখতে পারল না।
বাম পা একটু মচকে গেল আর সাথে সাথেই একেবারে ভূপাতিত। শরিফ দৌড়ে এসে ফাহিমকে মাটি থেকে তুললো। পা মনে হয় খুব ভালভাবেই মচকেছে। কিন্তু ফাহিমের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে আকাশের পাশের মেয়েটিকে দেখতেছে।
সেই চোখ, সেই ঠোটের নীচের তিল, সেই চশমা সবকিছু মিলে মেয়েটিকে অনেক কিউট লাগছে।
- কিরে ব্যাথা পেয়েছিস নাকি?(শরীফ)
- নাহ দোস্ত, কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।
- হুম তাহলে চল।
- দোস্ত' আকাশ ভায়ের সাথে এই মেয়েটা কে?(ফিসফিস করে)
- আরে বেকুব, সেটা তোর জম মিস পুরি, অহ থুক্কু পরী।
- অহ মোর জ্বালা, আসলেই আমি চিনতে পারিনি, ভাবলাম এই ময়দা সুন্দরীটা এলো কোন গ্রহ থেকে।
- অই বেঠা আস্তে বল, শুনলে বললাম কপাল খারাপ।
শরীফের কথা শুনে এবার রানা বলল,
- ওই বেটা তোরা এত্ত ভয় পাস কেরে? দেখবি" আমি এখন সরাসরি জামাইবাবুকে সরাসরি প্রস্তাব দিমু।
- মাইর খাইলে আমরা নাই।
- দূর, কি বলিস না বলিস, আজকের দিনে মাইর খামু? প্রেশ্নই আসেনা। তবে দোওয়া করিস কদ্দুরা।
- ওকে, শুভ কামনা রইলো।
ততক্ষনে আকাশ নিচে নেমে এলো, রানা এবার আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
- ভাই" তোর শালিকাটা কিন্তু হেব্বি কিউট, ওকে আমারে দিয়ে দিবি?
- মাইর এখন খাবি? না খাওয়ার পরে খাবি?
- আগে স্বীকার কর, তারপর খামু।
- হারামি তোরে যে এখন কি করি...! দাঁড়া আমি একটু ফ্রি হয়ে নিই।
- আমি কি এখানেই দাঁড়াই থাকমু ভাই?
- কি বললি তুই?
এই বলে আকাশ ধমক দিতেই রানা বাঁচাও বলে দিল এক দৌড়,
কিছুক্ষণ পরেই অনুষ্ঠান শুরু হবে, তাই আজকে পরী সেজেছে মনের মত করে, ওকে দেখে শরিফ" রানা" ফাহিম" সবাই একটু টাসকি খেল, আজ মেয়েটিকে বড্ড কিউট লাগছে। তাই রানা আকাশকে চেতানোর জন্য একটু দুষ্টুমি করলো, আর তার বিনিময়ে জামাইবাবু দিল এক দৌড়ানি। এ কেমন অবিচার? শালিকা চাওয়ার বিনিময়ে পেল দৌড়ানি। রানা একটু পর ঘুরে আবার আকাশের সামনে।
- দোস্ত" এতো জোরে কেউ ধমক দেই? দেখ এমন ভাবে দৌড়ানি দিলি একটুর জন্য পড়ে যেতাম।
- তোকে যে গুলি করি নাই এইটা তোর ভাগ্য।
- হ ভাই তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু ভাই' চাইলাম বেয়াইন, দিলি দৌড়ানি। ঠিকমত হজম হলো না ব্যাপারটা।
- ওকে চাওয়ার কারনেই তো দৌড়ানিটা খাইলি। আজ কিন্তু তোর কপালটা ফকফকা, অল্পের জন্য বাঁইচ্ছা গেলি।
- মানে?
- আরেকটুর জন্য অনন্যার সামনে পড়িস নাই, নাহয় থাবড়ানিটাও হয়ত বাদ যেতনা।
- কি..?? আমি কিন্তু এক্ষুনি সুইসাইড খামু?
- ওই বেটা' তোর এত কষ্ট করতে হবে কেন? তোরা কি আমার পর? তোরা হচ্ছিস আমার বন্ধু কম ভাই বেশি, মানে আমার কলিজা। তুই একবার বলে দেখ, প্রয়োজনে আমি নিজেই তোরে গলা টিপে মেরে ফেলবো।
- মাফ চাই গুরু, আমি না থাকলে তোর শালিকার কি হবে একবার ভেবে দেখছিস?
- ওই বেটা আবার শুরু করলি? এখন কিন্তু থাপ্পড় খাবি।
- অহ থুক্কু, আর কমুনা, আচ্ছা এখন বল আজ কি যেন?
- ভ্যালেন্টাইন'স ডে। কেন?
- তাই নাকি ভাই? বাহ! ভালবাসা দিবসে ভালবাসা পেয়ে যাবি। আর আমরা কি মুড়ি খাবো। তোকে এত করে বললাম, পোড়ার কপাল' রাজি করাতে পারলাম না।
- রক্ষা কর মাবুদ, ওই বেঠা কথা কম। এখন তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নে, বিয়ের পার্টির সময় ঘনিয়ে আসছে, এরেজমেন্ট তোদেরই করতে হবে।
- ভাই আমরা ধন্য হইলাম।
- পাম কম মার। এখন যা, কাজ সেরে তাড়াতাড়ি গেস্ট রুমে আয়, সারাদিন গেইটের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েদের দিকে তাকাতে তাকাতে দেখ একেকটার চেহারা কাকের মত হয়ে আছে।
- কি? বোড়া বয়সে আমাদের এমন বেইজ্জতটা করতে পারলি দোস্ত?
- যা ভাগ। ভাষণ অফ করে তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে নে, আমি গেস্ট রুমে আছি।
এই বলে আকাশ চলে গেল, রানা ও শরিফ গেল রেড়ি হতে, তখন ফাহিম একা একা গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, এমন সময় পরী এলো,
- বিয়েতে অমনভাবে আটা ময়দা না মাখলেও চলতো।
ফাহিমের কথাটা শুনে পরী চমকে উঠলো। মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা, ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। হয়তো ফাহিম ওর সাথে এমন একটা কথা বলবে এটা পরী ভাবতেই পারেনি।
- তুমি এমনিতেই সুন্দরী, মেকআপের কোন দরকারই ছিল না। জানো তোমাকে আমি চিনতেই পারিনি।
পরী কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলে উঠলো,
- এই বান্দর' তোমার কি এলার্জির সমস্যা আছে?
তুমি শব্দটা আসলেই মুখ ফসকে বের হয়ে গেল পরীর, তাই সে বেশ লজ্জা পেয়ে গেল।
- কেন বলো তো?
- না মানে' আপনি দেখি অনেক্ষন ধরে আমাকে পাম দিয়েই যাচ্ছেন, কিছুক্ষণ আগে দেখলাম সিড়ি থেকে পড়ে যাচ্ছেন, সমস্যা কি আপনার হে?
- তুমি শব্দটা কিন্তু তোমার মুখে বেশ ভালই লেগেছে, আর ওটাই আমার সমস্যা। বন্ধুদের মাঝে আপনি ওয়ার্ডটা একদম বেমানান।
- বন্ধু? কার বন্ধু? কিসের বন্ধু? তুমি আমার দুনিয়ার শত্রু, দুচোখের বিষ যাকে বলে আর কি!
- হা হা হা' তাহলে তো আরো ভালো, যতক্ষণ কাছে পাই জ্বালিয়ে মারা যাবে।
- মানে? বললেই হলো? এই যে তোমার সমস্যা কি? গতকাল ধরে দেখছি তুমি আমার পিছনে ঘুরতেছ!
- আমার তো কোন সমস্যা নেই। আর
আমি তো তোমার পিছনে ঘুরি না, বরং তুমিই আমার সামনে থাকো। আমি যখনই কোথাও যায় তখনই তুমি কোথা থেকে চলে আসো।
- অহ তাই? কথা একদম কম বলবা। তোমাদের মতো ছেলেদের আমার ভালো করে চিনা আছে। সুন্দরী মেয়ে দেখলে তার পিছনে ঘুরো। আচ্ছা তোমাদের কি আর কোন কাজ নেই? আর যেন না দেখি"।
- এই যে নিজেকে কি সেরা সুন্দরী মনে করো? তাহলে বলবো ভুল ধারনা এইটা তোমার। আয়নায় কখনো নিজেকে দেখেছো আর জানো তোমাকে যে পেত্নীর মতো লাগে? না পেত্নীও তোমার থেকেও দেখতে ভালো। হুহ" ময়দা সুন্দরী একটা।
- ওই ফাজিল ছেলে, দেখো' বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। আর একটা কথা বললে একদম জানে মেরে ফেলবো।
- হা হা হা' তুমি আবার কবে জল্লাদের খাতায় নাম লেখালে?
- তোমাকে মেরে নাম লিখাবো ফাজিল, তুমি আমাকে চেনো, আমি কে"?
- তুমি জানোনা তুমি কে? আচ্ছা দাঁড়াও" তোমার জন্য আমি ১ মিনিট নিরবতা পালন করছি। আর তুমি কে? তা জানতে পারলে আমি তোমাকে জানিয়ে দিবো। কিন্তু তোমার ফোন নাম্বার তো নেই আমার কাছে, তোমার নাম্বারটা দাও।
পরী এবার রেগে গিয়ে মেঘলা ও আকাশকে ডাক দিলো,
- আপু, অহ আপুরে, অহ আকাশ ভাইয়া এদিকে এসো।
আকাশ ও মেঘলাকে আসতে দেখে ফাহিমের মনটা কিছুটা ভার হয়ে গেল, ভয় পেয়ে গেল সে, মেয়েটি আবার সবার সামনে ইজ্জত খাবেনা তো! খুব অস্বস্তিবোধ করতেছে সে। কোনমতে পালাতে পারলেই যেন বাঁচে। এমন সময় হটাৎ আকাশের সাথে শরিফ ও রানা এলো, শরিফ খেয়াল করে ফাহিম একটু কেমন যেন করছে। তা দেখে শরীফ বলল,
- কিরে ফাহিম' ভাইং মাছের মত লাফাচ্ছিস কেন?
- দোস্ত' টয়লেট কোন দিকে আছে রে? খুব চাপ দিয়েছেরে ভাই।
- ছোট টা না বড়টা?
- বড় টা।
- তাহলে তো ব্যাপার সিরিয়াস। সোজা গিয়ে বাম দিকের গলির শেষ মাথায় পাবি, নাহয় সোজা গেস্ট রুমে গিয়ে মর।
- আচ্ছা তোরা গল্প কর। আমি একটু আসছি।
ফাহিমের কথা শুনে পরী মিটিমিটি হাসছে, সে তো জানে ফাহিম ভয়ে পালাচ্ছে!
- এই ছেলে' তুমি আবার কই যাচ্ছো?
পরীর কথার জবাব না দিয়ে ফাহিম সোজা হাঁটতে লাগলো গেস্টরুমের দিকে।। তারপর সবাই নিরব। শরীফ ও রানা তাকিয়ে আছে পরীর দিকে, মেঘলা ও আকাশ তাকিয়ে আছে ফাহিমের দিকে, আর পরী তাকিয়ে আছে নিচের দিকে।
- পরী' কিছু বলবে বোন?(মেঘলা)
- না আপু' তেমন কিছু না, আসলে তোমাদের অনেক্ষন দেখতেছি না, আমার একা একা ভাল লাগছিল না তাই।
- হি হি হি... পাগলী একটা, আমি না থাকলে তখন কি করবে?
- আহাহা' তুমি আবার কই যাবে? আমি একা থাকতে পারবো না আপু।
- তো?
- আমিও চইল্লা যামু তোমার সাথে।
পরীর কথা শুনে সবাই না হেসে পারলো না, শরীফ এবার আকাশকে কানের কাছে গিয়ে বলল,
- দোস্ত' তোর শালিকা তো বলল সে একা থাকতে পারবে না, তাহলে তোর শালিকাটারে আমাদের দিয়ে দে, দেখিস আমরা অনেক হাসি খুশিতে রাখবো।(ফিসফিস করে)
- কি বললি হারামি? ওই বেঠা' তোদের সমস্যাটা কি?
- না দোস্ত' কিছু না, আমি একদম ভাল হয়ে গেছি।
ওদের ঝগড়া দেখে মেঘলা বলল,
- কি হল আকাশ, তুমি উনাকে এভাবে বকতেছ কেন?
- না মনি' তেমন কিছু না, তুমি পরীকে নিয়ে উপরে যাও, আমরা একটু ভেতর থেকে আসছি।
তখন মেঘলা পরীকে নিয়ে উপরে চলে গেল, আর শরীফ ও রানাকে নিয়ে আকাশ গেস্ট রুমে গেল, হঠাৎ গেস্টরুমের দরজা বন্ধ করতে দেখে ওরা ভয় পেয়ে বলল,
- কিরে ভাই, হঠাৎ এভাবে দরজাটা কেন বন্ধ করলি?
- তোদেরকে একটু জামাই আদর করার জন্য।
- লক্ষণ তো ভালো ঠেকছেনা। আচ্ছা ব্যাপারটা কি বলতো?
তখন আকাশ কোত্থেকে যেন ফাটাবাশ একটা নিয়ে ওদের সামনে বসলো।
- এবার বল কার কি সমস্যা? আমার শালিকা তোদের কি করেছে! অরে নিয়ে কেন তোদের এতো মাথাব্যথা?
- আরে দুর' মাথাব্যথাটা ওর জন্য হবে কেন। মাথাব্যথাটা তো আসলে বউয়ের ঘ্যানর ঘ্যানর শুনার জন্য। তোর শালিকা তো মাশাল্লাহ হেব্বি কিউট।
- অই বেঠা ফাজলামি ছাড়, সোজাসুজি বল, নয়লে কিন্তু আজকে কুরবান করুম।
- দেখ দোস্ত" বেয়াইন বলে কি আমরা একটু চাইতে পারিনা। একটু আধটু প্রেম ট্রেম করতে চাইছিলাম, এই আর কি!!
- কি বললি? আর কবি কখনো?
এই বলে আকাশ ফাটাবাশ নিয়ে ওদের দৌড়াই ছুটলো, এর মধ্যে ওরা মাগো' বাবাগো' বাঁচাও বাঁচাও বলে পুরো গেস্ট রুম কয়েক পাক ঘুরা শেষ করলো।
এমন সময় হঠাৎ মেঘলা কেন জানি নিচে আসতেই ওদের চেঁচামেচি শুনে গেস্টরুমের দরজা নক করলো। আকাশ দরজা খোলতেই,
- কি হলো আকাশ? এতো চেঁচামেচি কেন?
আকাশ কিছু বলতে যাবে এমন সময় শরিফ বলে উঠলো,
- আরে ম্যাম' তেমন কিছু হয়নি, আসলে হয়ছেটা কি! আমরা কফি খেতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু আকাশ খেতে দিচ্ছেনা।
- অহ' আচ্ছা আপনারা আমার রুমে আসেন, আমি কফির ব্যবস্থা করতেছি।
তখন ওরা সবাই ভালো ও শান্তশিষ্ট ভদ্রছেলে হয়ে মেঘলার রুমে গেল।
রুমে গিয়ে দেখে সানজানা, অনন্যা, পরী, কালাম, রিয়া, সবাই সোফাই বসে গল্প করতেছে। ওদের সাথে আকাশ, মেঘলা, শরিফ, রানাও বসলো, আকাশ ফোন দিয়ে ফাহিমকেও নিয়ে এলো, সবাই বসে গল্প করতেছে, এমন সময় মেঘলা ভাবিকে ফোনে বলল বোয়া আন্টিকে দিয়ে কফি পাটিয়ে দিতে।
সেটা শুনে সবাই এবার বায়না ধরলো মেঘলার হাতের বানানো কফি খাবে। এবার মেঘলা গেল বিপদে পড়ে, কি মুসিবতরে বাবা, মেঘলা তো জীবনে কখনো কফি বানিয়ে খাইনি, এখন কি হবে! বন্ধুদের আবদার মেটাতে শেষমেশ রাজি হয়ে কিচেনে চলে গেলো।
ওর সাথে পরীও গেল, কিচেনে গিয়ে মেঘলা আকাশকে ফোন দিয়ে নিয়ে গেল।
- কিরে মনি, আমাকে কেন ডাকলে?
- আন্ডা পারার জন্য বান্দর, তুমি জানোনা আমি কফি বানাতে পারিনা?
- তো পরী বানালেই তো হয়! আমাকে ফোন করা লাগে?
- না' আমার এখন তোমার হাতের কফি খেতে ইচ্ছে করছে।
পরী এবার রুমে ফিরে গেলো। কি মুশকিল! কার মুসিবত কার উপরে ফেললো, কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা, কি আর করা প্রিয়তমার কথা কি আর ফেলা যায়! তাই আর কথা না বাড়িয়ে কফি বানাতে বানাতে বলতে লাগলো।
- আম্মু'গো তুমি কেন আমাকে বিয়ে করাইলে? তুমি একটা ভালো মেয়ে দেখে আমাকে বিয়ে করাইতে পারলে না। আমি তোমার কত আদরের ছেলে ছিলাম। আর তুমি কিনা একটা বজ্জাত মেয়ে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিলে।
যাকে আমি কফি করে খাওয়াই।
(আকাশ কফি করতেছে আর মোবাইলটা হুদায় কানের কাছে লাগিয়ে মেঘলাকে চেতানোর জন্য জোরেজোরে এসব কথা বলে যাচ্ছে)
- আমি বজ্জাত মেয়ে? আমি কোনদিন রান্না করিনি। আমি কোনদিন নিজে কফি করে খাঁই নি। আমি কখনো নিজহাতে খেতে পারিনা, তাতো তুমি ভালো করেই জানো।
- হায় রে রাজরানী আমার। তো নাচানাচি করতে পারতে? একটু নাচানাচি করে দেখাও তো। তবুও আমার মনটাকে একটু বুঝাতে পারব যে আমার বউ আর কিছু পারুক আর নাইবা পারুক নাঁচতে পারে।
- ইশ! শখ কত। কথা কম বলো, তাড়াতাড়ি আমার কফি রেড়ি করো। অনেক খিদা লাগছে।
- এই মনি, তুমি কি সত্যিই মেয়ে। আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে। যে মেয়ে এক কাপ কফি করতে পারে না। সেই মেয়ে আবার মেয়ে হয় কিভাবে?
- এই শুনো' আর একটা বাজে কথা বললে আমি কিন্তু তোমাকে একদম কাঁচা চিবিয়ে খাবো। আমি কিছু করতে পারি আর নাইবা পারি মারতে কিন্তু টিকই পারি।
- তুমি কিছুই করতে পারবে না। শুধু গাঁয়ে পড়ে ঝগড়া করতে পারবে।
- আমি ঝগড়া করি? দাঁড়াও' তোমারে দেখাচ্ছি মজা।
এই বলে মেঘলা গিয়ে আকাশের টি-শার্ট ধরে টান দিতেই...!
- বউরে' অহ বউ, এমন করেনা মনি, নিজের স্বামীকে মারতে নেই। দেখতেছি' বউটা রেগে গেলে কেমন লাগে।
- তুমি আমাকে আগের মত ভালবাসোনা আকাশ।
- অহ' তাই তো, তবে চিন্তাই আছি, কত বেশি ভালবাসলে এভাবে হাসি খুশিতে বাকীটা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়,
- আর?
- আর এভাবে সারাজীবন আগলে রাখা যায়।
কথাটা বলতে বলতে মেঘলাকে বুকে টেনে নিল আকাশ। পরীকে কিচেনের দিকে আসতে দেখে মেঘলা তাড়াতাড়ি আকাশের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিল। এতক্ষনে আকাশ কফি বানা প্রায় শেষ শুধু একটা বাকী আছে। এমন সময় পরী এসে বললো।
- ভাইয়া' আপনারা রুমে যান, আমি ওটা বানিয়ে একসাথে নিয়ে আসছি।
ওরা ড্রয়িং রুমে ফিরে এলো, একটু পর পরী এলো একটা ট্রাই করে কফি নিয়ে, সবাইকে কফি দিলো টিকই কিন্তু ফাহিমকে দিল খালি কাপ,
তা দেখে ফাহিম অবাক হওয়ার পরিবর্তে হেসে দিল, ওর হাসি দেখে বাকীরা সবাই অবাক হয়ে গেল, কৌতূহল বসত শরিফ জিজ্ঞেস করে বসে,
- কিরে ফাহিম, তুই অবাক হওয়ার পরিবর্তে এরকম অদ্ভুত ভাবে হাসছিস কেন?
- এমন কতদিন যে গেলরে দোস্ত, দেখে দেখে আমি অভ্যস্ত। একেই বলে কপাল।
- ভেরি ইন্টারেস্টিং, তো বল শুনি!
- গত মাসখানেক আগে আমি অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর আম্মু দেখি হাতে একটা চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,
আমাকে বললেন, অফিস থেকে ফিরলি অথচ কিছু খাবিনা তা কি হয় বাবা? এই নে চা, এই বলে উনি চায়ের কাপ আর প্লেট সামনের টেবিলে রাখলেন, আমি কাপটা তোলে মুখে দিতেই দেখি কাপটা খালি।
আমি উনার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি বললেন, কি বাবা! চা নেই?
আমি মাথা নাড়াতেই আম্মাজান কিছুটা রাগের স্বরে বললেন, ঘর আছে' ছেলে আছে' বউমা নেই, তাই এখন থেকে প্লেট আছে' কাপ আছে' চা নেই, এভাবে চলতে থাকবে যতদিন এই ঘরে বউমা না আসে।
সেই থেকে শুরু এখনো পর্যন্ত, এখন আল্লাহ পাক ভালো জানেন এভাবে আর কতদিন চলে!""
ফাহিমের কথা গুলো শুনে সবাই হাসতে হাসতে নাজুক অবস্থা,
এদিকে পরী বেশ লজ্জা পেয়ে গেল, সে তো ফাহিমের সাথে দুষ্টুমি করে দিয়েছে, কিন্তু এমন হবে কে জানতো, হয়ত ছেলেটি কষ্ট পাইছে, তাই ভেবে পরী ফাহিমকে বলল,
- আসলে আমিই সরি, জানতাম না এমন হবে।
- হা হা হা' আরে কি বলো এসব, দুষ্টুমি না হলে কি আসর জমে?
ওদের কথা শেষ হতেই মেঘলা আকাশকে বলে উঠলো,
- আকাশ শুনো!
- হুম,
- কফির কাপটা তো বেশ গরম, তুমি যদি একটু ধরে খাওয়াই দিতে। তাহলে আমার খেতে সুবিধে হতো।
- তো আমারটা কে খাওয়াবে?
- তুমিই খাবে।
- তা হবেনা, তুমি খাওয়াই দিবে বলে রাজি হলে তো আমি ভেবে দেখতে পারি।
- তুমি আসলেই একটা বদের হাড্ডি, আচ্ছা টিক আছে এবার খাওয়াই দাও।
আকাশ ও মেঘলা কফির কাপটা হাতে নিয়ে একে অপরকে নিজ হাতে খাওয়াই দিচ্ছে দেখে শরীফ ও রানা একসাথে বলে উঠলো,
- আহারে কি পোড়া কপাল, বউ থাকতেও আমাদের নিজেরই খেতে হয়।
ওদের কথা শুনে সানজানা ও অনন্যা মুচকি হেসে কফির কাপ গুলো হাতে নিয়ে একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছে, তাদের সাথে কালাম রিয়াও।
এখন ফাহিম ও পরী গেল বিপাকে পড়ে, সেখান থেকে পালিয়েও যেতে পারছে না, আবার কফি একটা বলেই একে অপরকে ফেলে খেতেও পারছেনা। ওদের বসে থাকতে দেখে রানা বলে উঠলো,
- কিরে ফাহিম, চুপ মেরে আছিস কেন? লজ্জার কিছু নাই, আজকের জন্য সব ফ্রি।
কথাটা শুনে পরী কফির কাপটা হাতে নিয়ে ফাহিমকে বলল,
- এটা তুমি খেয়ে নাও, আমি পরে খাবো।
- তা কি করে হয়, এটা হবে ফিপ্টি ফিপ্টি, মানে' তুমি অর্ধেক আমি অর্ধেক।
- তাহলে আগে তুমি খেয়ে নাও,
- না' আমি না তোমার দুনিয়ার শত্রু, তোমাকে ফেলে কেমনে খাই। তবে একটা শর্ত, আমার হাতে খেতে হবে।
পরী আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে থাকে ফাহিমের হাতে কপি।
পরী অর্ধেক খাওয়ার পর বলল,
- এবার তুমি খেয়ে নাও।
- তা হবেনা, তোমার খাওয়াই দিতে হবে, এটা খালি কাপ দেয়ার শাস্তি।
কি আর করা, এবার পরী ফাহিমের হাত থেকে কাপটা নিয়ে নিজ হাতে ফাহিমকে খাওয়াই দিলো।
তারপর কিছুক্ষণ গল্পগুজব শেষে ওরা সবাই যার যার মত রেড়ি হতে চলে গেল।
-
.......চলবে......
-

No comments

জনপ্রিয় পোষ্ট

  জন্ম নিবন্ধন করবেন ভাবছেন, আর ভাবনা নয় সপ্ন এখন সত্যি সব এখন হাতের মুঠোয়, [ http://bdris.gov.bd/br/application ]( http://bdris.gov.bd/br...

Powered by Blogger.