Header Ads

Header ADS

" তৃপ্ত ছায়া" <,

" তৃপ্ত ছায়া" <,
-
-------"পর্ব সাতান্ন",
-
সন্ধ্যা ফেরিয়ে রাত এলো,
বিয়ের আনুষঙ্গিকতা শুরু হয়ে গেল।
পুরো ঘরজুড়ে রংবেরঙের বাতি জ্বলছে, অতিথিরা একে একে সবাই ছাদে গিয়ে পার্টিতে উপস্থিত হতে শুরু করছে। চারপাশটা আতশ বাজির রঙিন আলোই আলোকিত হয়ে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে, সেই আলোই অতিথিদের মনেও খুশির আমেজ ছড়াচ্ছে। কি যে এক মনোরঞ্জন পরিবেশ। এই জমকালো অনুষ্ঠানে নিত্য, জাকির, বাবুল, ইসমাইল সহ বন্ধুদের অনেকেই নেচে গেয়ে হইহুল্লো ও আনন্দ করছে। ওরা নানান রঙে মন মাতানো ঢঙে রাতের আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে।
একটু পরে ফাহিম ছাদে এসে সবার সাথে পার্টিতে যোগ দিল, কিন্তু সমস্যা বাধলো আরেক জায়গায়, ফাহিম পার্টিতে এটেন্ট হল টিকই কিন্তু সীট খুজে পাচ্ছেনা যে বসবে। (তা দেখে পরী মিটিমিটি করে হাসছে আর মনে মনে বলছে' "আজকে তোমারে ভাগে পাইছি চান্দু, এবার যাইবা কই) কারণ সারা পেন্ডেলে পরী মেয়েটার পাশের সীটটা ছাড়া আর কোন সীট খালী নেই তাই বাধ্য হয়েই ফাহিম যেই মেয়েটার পাশে বসলো, তখনই বাধলো বিপত্তি, তখন মেয়েটা হঠাৎ করে বলে উঠলো।
- আরে আরে তুমি এখানে বসছো কেন? যাও অন্য কোথাও গিয়ে বসো।
- কেন তুমি কানা নাকি দেখছো না অন্য কোথাও জায়গা খালি নেই।
- তো এখন কি আমার পাশেই বসতে হবে?
- হ্যা" তোমার পাশেই বসতে হবে, কেননা শুধু তোমার পাশের এই মূল্যবান সীটটা ছাড়া আর যে সীট খালি নেই।
- সীট খালি নেই তো ফ্লোরে বসো। এখানে অনেক জায়গা খালি আছে।
- কি? আমি ফ্লোরে বসবো" তোমার মাথায় সমস্যা আছে নাকি? যদি এই অভ্যাসটা তোমার থেকেও থাকে তাহলে এখানেও ফ্লোরে বসতে পারো কিন্তু আমি পারবোনা। কেননা" এরকম কোন ভাল বদ অভ্যাস আমার নেই (এই কথা বলে যখন পাসের সীটে বসতে গেল ফাহিম তখন আবার পরী বলে উঠলো)
- আরে আরে তোমাকে না আমি মানা করলাম এখানে বসতে তবুও বসতেছ? তাছাড়া একটা মেয়ের পাশে বসছো কেন?
- আসতাগফিরুল্লা" নাউজুবিল্লা" তুমি মেয়ে নাকি আবার! তুমি তো একটা জল্লাদ মার্কা কটকটি, শুধু গায়ে পড়ে ঝগড়া করো।
- এই ফাজিল ছেলে এসবের মানে কি?
- কিছু না' অনেক হয়েছে এবার চুপ করো, দেখছো না পার্টিতে অনেকেই মেয়েদের পাশে কত ক্লোজ হয়ে বসেছে আমি তো তোমার সাথে ঘেষে বসছি না?
- কি বাজে বকছো, আর আমি তো তোমার গার্লফ্রেন্ড বা বন্ধুও না যে আমার পাশে ক্লোজ হয়ে বসবে।
- প্রেমিকা কিংবা বন্ধু না হলেও আমি না তোমার সারা জীবনের শত্রু? আর শত্রুদের পাশে বসার মজাই আলাদা যেটা তোমার এই ছোট্ট মাথায় ডুকবে না।
ফাহিমের এমন উত্তরের পর পরীর আর কিছুই বলার থাকেনা, তাছাড়া ফাহিমের সাথে দুষ্টুমি করতে ওর ভালই লাগে। অনেক জ্বালিয়েছে তাই আর কিছু না বলে মুচকি হেসে চুপচাপ বসে রইলো।
এমন সময় রানা এলো তাদের পাশে এক্সট্রা একটা চেয়ার নিয়ে বসলো,
- কিরে ফাহিম কি করতেছিস?
- পরী ম্যামের সাথে একটু রাজনৈতিক আলাপ করতেছি।
- অহ' করতে থাক, আচ্ছা গান বন্ধ হয়ে গেল কেনরে?
- তাতে কি হয়েছে, আমরা কি মরে গেছি নাকি?
- অহ শিট' তুই যে বেঁচে আছিস সেটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম, এখন তাইলে তুই গান গা আর আমরা শুনি।
তখন ফাহিম ও রানা দুষ্টুমি করে চেয়ারে হাতের সাহায্যে ঢোল বাজাতে লাগলো, আর পরীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ওরা গান শুরু করে দিল।
- বৃষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর পায়ে দিয়ে সোনার নুপুর..
পাশে বসে ট্যারাচোখে কোন রুপসী দেখে যায়.! অহ অহ বৃষ্টি পড়ে...!!
এমন সময় শরিফ গিয়ে রানার মাথায় একটা থাপ্পড় দিয়ে বলল .
- ঐ ফইন্নি এটা কি রকমের গান গাচ্ছিস? এইটা কোনো গান হইলো?
- আরে হারামি তুই বুজস না কেরে? হারামিটার পাশে তো রুপসী বসে আছে, আর এজন্য মুখ দিয়ে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছে।
- আরে এখানে তো আমি কোন রুপসিকে দেখতে পাচ্ছিনা, যাকে দেখছি সে তো মিস পুরী খানের মত ডাইনী মার্কা।
ওদের কথা শুনে পরী রেগে মেগে স্টেজ থেকে চলে গেল, তা দেখে ওরা হেসে আবার মনের সুখে গান শুরু করে দিল।
কিছুক্ষণ পর পরী আবার ফিরে এসে রাগত স্বরে বলল..
- এই যে ইয়ো ইয়ো কাউয়া ব্যান্ডের দল, এবার আপনারা আপনাদের কা কা টা বন্ধ করেন, ভাইয়া আসছেন।
মেয়েটার কথা শুনে ওরা ওদের গানটা বন্ধ করে ঠিক হয়ে বসলো। কিন্তু হঠাৎ রানার মনে হল" আরে মেয়েটা কি বলল? আমরা কাউয়া ব্যান্ড আর আমরা কা কা করছি? তখন সে পরীর দিকে চেয়ে মুড নিয়ে জিজ্ঞাসা করল..
- এই যে মিস পুরী খান আপনি একটু আগে আমাদেরকে কি বললেন?
- কেন শুনেননি? বললাম যে আপনাদের কা কা টা একটু বন্ধ করার জন্য আপনাদের স্যার আসতেছেন।
- এই যে মিস পরী আমরা কি কা কা করছিলাম? দেখছিলে না আমরা গান গাচ্ছিলাম।
- ও মাই গড' এটাকে গান গাওয়া বলে
নাকি? আমি তো আবার ভাবছিলাম যে এক ঝাক কাকের দল মিলে কা কা করছে।
- কি? এত বড় কথা! তোমাকে আমি....!
- আমার কচু করবেন কাউয়ার দল। হি হি হি...!
এই বলে পরী হেসে চলে যেতেই ফাহিম হাত ধরে টেনে তাকে পাশের চেয়ারে বসালেন, তারপর ওরা সবাই মিলে বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আনন্দ উপভোগ শেষে পরী রুমে ফিরে গেল।
এবার অতিথিদের আনন্দ উল্লাস শেষে মেঘলার আব্বু রায়হান চৌধুরী, বড় ভাই ওবাইদুর রহমান চৌধুরী, মেজো ভাই এম এ মনসুর চৌধুরী, আকাশের বাবা বুলবুল আহমেদ সাহেব, মা নাজমা আহমেদ স্টেজে উপস্থিত হল।
স্টেজটা ছিল তুলনামূলক ভাবে বেশ বড়।
এই বিশাল স্টেজে অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়ীত্বে পড়লো কালামের উপর। উনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন.!
- খুশির জোয়ার বইছে মনে" মেঘলা ম্যামের বিয়ে,
আকাশ ভাই সাজবে বুঝি" মাথায় পাগড়ি দিয়ে।
সাজবে ওরা আপন মনে" রঙবেরঙের সাজে!
আনন্দ ফুর্তি থাকবে তাতে" অতিথিবৃন্দের মাঝে।
দোয়া করি তোমরা দুজন" বাঁধো সুখের নীড়!
এই বাঁধন থাকে যেন" খুবই সুনিবিড়...!!
"সম্মানিত উপস্থিতি আসসালামু আলাইকুম, যাদের তরে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস উৎসর্গ, উনারাই এখন আমাদের মাঝে উপস্থিত হতে যাচ্ছেন! এই পার্টির মধ্যমণি' মিস্টার আকাশ চৌধুরী এবং মিস প্রিয়ন্তি চৌধুরী(মেঘলা)।
সবার পক্ষ থেকে রইলো অভিনন্দন ও অশেষ মোবারকবাদ।
কথাগুলো শেষ হতেই চতুর্দিক থেকে বৃষ্টির মত হাততালির শব্দে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠলো।
এখন সবার দৃষ্টি স্টেজের দিকে, একটু পর স্টেজের পেছনে পর্দার আড়াল থেকে প্রথমে সানজানা একটা বিশাল কেক হাতে স্টেজে উপস্থিত হতেই উপস্থিত সবাই ভেবাচেকা খেয়ে গেল, ব্যাপার কি? সানজানা একা কেন? তারপর এলো অনন্যা, এর পিছন পিছন এলো রিয়া, তন্নি, মৌমিতা, একে একে ওরা সবাই এলো অথচ মেঘলার কোন দেখা নেই। সবাই এখন অপেক্ষায় আছে আকাশ ও মেঘলাকে দেখার,
স্টেজের পাশেই আকাশ বন্ধুদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মেঘলা এখনো আসেনি দেখে শরীফ সানজানাকে ইশারাই জিজ্ঞেস করলো মেঘলা কোথায়? সে আংগুলের ইশারাই ইঙ্গিত করে বুঝালো এক্ষুনি এসে পড়বে।
বলতে না বলতেই দিহান মেঘলার আঙুল ধরে আগে আগে হেটে স্টেজে আগমন করলো। মেঘলার একপাশে মেজো ভাবি আর অন্য পাশে পরী।
মেঘলার পরনে লাল পাড়ের উপর ক্রিম কালারের বিয়ের লেহেঙ্গাতে বেশ সুন্দর মানিয়েছে, পরী ও ভাবি পড়েছে মিষ্টি কালারের উপর ব্লু পাড়ের শাড়ি, আর সানজানা" অনন্যা" তন্নি" রিয়া" মৌমিতা" ওরা সবাই ব্লুর উপর হালকা পিংক কালার শাড়ি পড়েছে।
এবার স্টেজে সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ালো। ওদের দেখে মনে হচ্ছে যেন আকাশ থেকে একঝাঁক ডানাকাটা পরী স্টেজে নেমে এসে চারদিকে সৌরভী ছড়াচ্ছে।
এদিকে মেঘলাকে দেখে আকাশ এমন ভাবে ডেবডেব করে তাকিয়ে আছে যেন মেঘলাকে সে জীবনেও দেখেনি" এই প্রথম দেখলো। তা দেখে পরী আকাশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চোখ মেরে দিলো।
এবার আকাশ সোজা বেকুব বনে গেল, কিরে বাবা' এটা তো শালিকা নই, যেন একটা ঝাল মরিচ, কোন সময় জানি আবার নাচিয়ে ছাড়ে মাবুদ ভালো জানেন। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আকাশের কানের কাছে গিয়ে শরিফ ও রানা দুজনেই একসাথে বলে উঠলো..!
- দোস্ত" আমার বউ কোনটারে???
- যে কোন একটার কাছে গেলেই হলো, তবে দেখিস" আবার যেন মাইর খেতে না হয়।
- না মানে" ওদেরকে যে এত সুন্দর লাগে শাড়িতে, ইতিপূর্বে তা আগে কখনো অনুভব করিনি দোস্ত!
- ওই বেঠা সব কইটা বাদ দিয়ে একটারে দেখ।
- আচ্ছা মুই তোর শালিকারে দেখতেছি, পরীটারে আজকে টিক পরীর মত লাগছে।
- এখন কিন্তু তোর কপাল খারাপ হবে বললাম।
- আজকে তুই আমার কচু করতে পারবি হারামি।
- আমি না পারলে কি হয়ছে, সানজানা তো আছে।
- দোস্ত মোরে বেইজ্জত করিস না, মুই একদম ভাল হয়ে গেছি দেখ।
এই বলে শরীফ পাঞ্জাবিটা টিক করতেছে। এমন সময় কালাম আকাশকে আমন্ত্রণ করলো স্টেজে আগমন করার জন্য।
আকাশ এবার শরীফ, রানা ও ফাহিমকে সাথে নিয়ে স্টেজে উঠলো। সাথে ছোট বোন তন্নি ও মৌমিতার হাসবেন্টও উঠলো।
আকাশ ও মেঘলাকে দেখে উপস্থিত সবাই অজস্র হাত তালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে থাকে, আজ আকাশ ও মেঘলাকে বেশ দারুন মানিয়েছে।
ওরাও হাত উচিয়ে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে নিজ আসনে গিয়ে দাঁড়ালো।
এবার নিয়ম অনুসারে শরিফরা সবাই যার যার পরিবারের পাশে দাঁড়ালো। এখন ফাহিম বাধ্য হয়ে পার্টির সৌন্দর্য রক্ষার্থে পরীর পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই পরী তাকে বলল...
- এই দেখো তো আমাকে শাড়িতে কেমন লাগছে?
- রাস্তার ভিখারীর মত :ডি।
- মজা কর কেন? সত্যি করে বল।
- কেন? ভিখিরীরা মানুষ না?
- হুম মানুষ। আমি তো তাদের ঘৃনা করিনা।
- জানি।
- তো বলনা কেমন লাগছে?
- ভালো করে সামনে দাঁড়াও।
- হুম দাঁড়ালাম।
- মনে হচ্ছে.......!!
- কি মনে হচ্ছে? (আগ্রহ নিয়ে)
- মনে হচ্ছে বসন্তে শিমুল গাছের ফোটা প্রথম ফুল। যা শিমুল গাছ পরম ভালোবাসায় ফোঁটায়। বসন্তের প্রথম সাক্ষী। কবিদের কবিতার রসদ। তেমনি তোমাকে আমার কাছে জীবনের দূত মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে তোমার জীবন সাগরে সাতার কাটি। জানি" সমুদ্রে সাতার কাটা সহজ কিন্তু গন্তব্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। তারপরও তোমার জীবন সাগরে সাতার কাটতে ইচ্ছে করছে।
- যাও! তুমি আসলেই ফাজিল। তুমি কি দেখনা আশেপাশে কত মানুষ?
- কই এত মানুষ?
- অহ তুমি দেখবা কেমনে? তুমি যে রাতকানা।
- লজ্জা পাচ্ছ কেন? আমি তো তোমার....! তোমার জীবন সাগরে তো আমিই সাতার কাটাবো।
- আহাহা" শখ কত! একদম জানে মেরে ফেলবো।
- আচ্ছা পরী আমি কি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি?
- না। আমার লজ্জা করে। হাজারও মানুষের সামনে?
- সমস্যা কি? আমার পরীকে আমি জড়িয়ে ধরবো তাতে কার কি?
- অই ফাজিল, তোমার নয় লজ্জা নেই' কিন্তু আমার তো আছে।
- হুম। ঠিক আছে এখন ছেড়ে দিলাম। পরে কিন্তু ছাড়বোনা।
- দেখা যাবে, একদম খুন করে ফেলবো।
পরীর কথা শুনে ফাহিম আর কথা না বাড়িয়ে মুচকি হেসে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়ালো।
এদিকে ফাহিম ও পরীকে একসাথে দাঁড়াতে দেখে সানজানা ও অনন্যা মিটিমিটি হাসছে, তবে আজ ওদের বেশ ভালো মানিয়েছে।
তারপর এই বিশাল স্টেজে দাঁড়িয়ে মেঘলার মেজো ভাই এম এ মনসুর চৌধুরী সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
- হ্যালো লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান, আমি অতি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে" আজ আমাদের প্রাণ প্রিয় অতি আদরের ছোট বোন প্রিয়ন্তী চৌধুরী মেঘলার
"শুভ বিবাহ" অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে।
বিয়ে উপলক্ষে এই চৌধুরী পরিবারের এই বিশাল পার্টিতে আপনাদের মত মহান ব্যক্তিদের আজকের এই পদচারণ/আপনাদের উপস্থিতি আমাদের আনন্দকে বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছেন। আপনাদের সকলের তরে আমার আন্তরিক অভিনন্দন রইলো। আপনারা সবাই চৌধুরী পরিবারের রাজকুমারী টার জন্য দোওয়া করবেন....!!!
কথা গুলো শেষ হতে না হতেই বৃষ্টির মত হাত তালির শব্দে চারিপাশ মুখরিত হয়ে উঠলো।
মেঘলার একপাশে ওর বাবা রায়হান চৌধুরী আছেন, উনার পাশে ভাবি ও ভাই। এদিকে আকাশের পাশে ওর বাবা মা। এবার বিয়ের কেক কাটার পালা।
মেঘলা পার্টি কেক কাটার আগ মুহূর্তে বাবাকে পা ছোঁয়ে সম্মানের সাথে সালাম করতেই উনি মেয়েকে দুহাতে উঠিয়ে নিলেন, এবং কপালে একটু চুমু দিয়েই বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলেন।
- আব্বুনী" তোমাকে চোখের জলে ভাসিয়ে আমার যাওয়া হবেনা।
উনি তখন চোখের জল লুকানোর বৃথা চেষ্টা করেন, সন্তান হারানোর ব্যথা কি কোন বাবা মা সহন ক্ষমতা রাখে। রাখেন না, তাই উনিও পারেননি।
- পাগলী মেয়ে আমার। তুই যে চৌধুরী পরিবারের প্রদীপ। তাই হয়ত কিছুটা কষ্ট হচ্ছে মা।
মেঘলা কোন মতে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাবি ও ভাইয়াকে সালাম করে আকাশের বাবা মাকে সালাম করার পর নিজ স্থানে ফিরে এলো, আকাশও বাবা মা সহ সবাইকে সালাম করলো।
তারপর বিয়ের কেক কেটে আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষ করে মুরব্বিরা স্টেজ থেকে বিদায় নিলেন।
আকাশের বন্ধুরা এতক্ষণ চুপ করে অনুষ্ঠান অনুভব করেছিলেন, এখন মুরব্বিবর্গরা বিদায় নিতেই মুহুর্তেই বন্ধুদের আনন্দের শেষ নেই, এবার প্রাণ খোলে আনন্দ করা যাবে। এখন চারপাশটা আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে, সবার মুখে মুখে আনন্দের হাসি। শরিফ গিয়ে রানা ও ফাহিমকে স্টেজ থেকে টেনে নিচে নামিয়ে ফেলল, তারপর বলল...
- তোমরা কে কোথায় আছো এদিকে এসো, নাচো, গাও' ঢোল বাজাও, আনন্দ কর।
ততক্ষনাৎ মিউজিসিয়ান মিউজিক অন করলো, সানাই বাজছে, মিউজিক বাজছে, ক্ষনে ক্ষনে আতসবাজির আলোই চারিপাশ আলোকিত হয়ে উঠছে। সানজানারা স্টেজ ছেড়ে নিচে নেমে এলো, মিউজিকের তালে তালে শরীফ সানজানা, রানা অনন্যা, কালাম রিয়া, ফাহিম পরী, তন্নি, মৌমিতা ওরা সবাই একে অপরের হাত ধরে নিত্য পরিবেশন করতে থাকে, ওদের সাথে ফ্রেন্ড সার্কেল ও অতিথিদের মধ্য থেকে কয়েকশ জুটি ওদের সাথে আনন্দে যোগ দেয়। মুহূর্তেই পার্টিটা যেন এক স্বর্গপূরীতে পরিণত হলো।
আনন্দে উল্লাসিত হয়ে এক পর্যায়ে ওরা গান গাওয়া শুরু করে দিল...!
শরিফ- বাজারে ঢোল তোরা বাজারে ঢোল, সবার মনের খুশির দোওয়ারটা খোল,
সানজানা- আজ শুভ বিবাহের সেই শুভ ক্ষণ, আজ দুটি মনের হল মধুর মিলন...!!
সবাই মিলে- বাজে ঢোল, বাজে ঢোল, বাজে ঢোল....!!
রানা- বিধাতার ইশারা হল যখন, দুটি হৃদয় এক হল তখন।
অনন্যা- দুয়ে দুয়ে মিলে হল এক, দেখরে দেখ তোরা আনন্দ দেখ।
শরিফ ও সানজানা- আজ শুভ বিবাহের সেই শুভ ক্ষন, আজ দুটি মনের হলো মধুর মিলন..!!
কালাম- আজ থেকে সুখে দুঃখে রবে দুজন, গড়বে দুজনেতে সুন্দর জীবন।
রিয়া- আজকে দুটি মনে হলো বাঁধন, অটুট রবে এই শুভ মিলন।
শরিফ ও সানজানা- আজ শুভ বিবাহের সেই শুভ ক্ষন" আজ দুটি মনের হল মধুর মিলন।
সবাই মিলে- বাজে ঢোল, বাজে ঢোল, বাজে ঢোল...!
গান শেষ হতে না হতেই উপস্থিত সবার হাত তালির শব্দে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠলো।
এবার কালাম স্টেজে উঠে স্পিকার হাতে নিয়ে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,
- সম্মানিত উপস্থিতি এখন আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করে আনন্দ উপহার দিবেন আমাদের প্রাণ প্রিয় বন্ধু মিস্টার ফাহিম এবং মিস সুফিয়া পারভিন পরী।
তা শুনে ফাহিমের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, কি মুসিবতরে বাবা' ওরা আবার যে কি বিপদে ফেললো, যমের ভয় নাকি সর্গের দ্বারে গেলেও ছাড়েনা, যে জন্যে এতক্ষণ ভয়ের মধ্যে ছিল তা এখন ঘাড়ের উপর। নাম যেহেতু বলেই ফেললো, কিছুই করার নেই, কিন্তু পরীর সাথে গাইবেই বা কি? পরী যে কি সাংঘাতিক মেয়ে ফাহিম তা ভালো করেই জানে। উল্টাপাল্টা হলে ইজ্জতের ফালুদা করেই ছাড়বে।
কোন উপায়ান্তর না দেখে ফাহিম পরীর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
- আমার কোন দোষ নাই পরী, সব দোষ ওই নাম উল্লেখকারীর।
- তো আমি কি করতাম?
- দেখো' নাম যেহেতু বলেই ফেললো কিছুই করার নেই, চলো এবার একটু প্রেম করি, থুক্কু গান করি।
- অই ফাজিল ছেলে কি বললা?(কিছুটা বড় গলাই)
- অহ মোর আল্লাহ, What a terrible girl.Father..!
- একদম জানে মেরে ফেলবো ফাজিল।
- আচ্ছা মারলে পরে মাইরো, এবার চলোনা প্লিজ, সবাই অপেক্ষা করছে তো।
- Stupid.... তোমার সাথে গান করবো? Impossible. মাথা খারাপ হলেই তো।
- আচ্ছা হাত দুটো ধরে রাখলেই হবে, তোমার গান করা লাগবেনা। আজকে অন্তত মোর ইজ্জতটা বাঁচাও মিস পুরী ম্যাম।
- কি বললা? মিস পুরী মানে?
- অহ থুক্কু আর কমুনা, কান ধরমু গানের পর, এবার তো আসো।
ফাহিমের কথা শুনে পরী এবার ফিক করে একটা হাসি দিয়ে ফাহিমের হাত ধরে নিত্য পরিবেশন করতে থাকে, তাদের সাথে শরিফ সানজানা" রানা অনন্যা" কালাম রিয়াও যোগ দিলো, তাদের সাথে নাচে অংশ নিলো উপস্থিত শত জুটি। এবার সবাইকে নিয়ে ওরা মিউজিকের তালে তালে গান ধরলো..!
ফাহিম- বিয়েরও ঢোল বাজাওরে... বিয়ারও সানাই বাজাওরে...!
পরী- বিয়েরও ঢোল বাজাওরে... বিয়ারও সানাই বাজাওরে...! নাচবো আমি কোমর দোলাইয়া, মন ভুলাইয়া প্রাণ ভুলাইয়া, ছন্দে ছন্দে আজ আনন্দে হব পাগলপারা... নাচবে জমিন, নাচবে আসমান, নাচবে চন্দ্র তারা...!
তন্নি- বউএর কি মিষ্টি মুখ, দেখে লাগে মনে বড় সুখ..!
পরী- স্বামী হইলো বউএর অঙ্গে হীরা মতির গয়না...
ফাহিম- আবার' বউ যে হইলো স্বামীর বুকে প্রাণের তোতা ময়না...!
পরী- এই যে জোড়া আল্লাহই বান্দে, সবি তার ইশারা!
সবাই- নাচবে জমিন, নাচবে আসমান, নাচবে চন্দ্র তারা...!
গান শেষ হতে না হতেই অজস্র হাত তালিতে আনন্দ প্রকাশ করলো সবাই, এবার সবাই একটু ভিন্ন মাত্রার স্বাদ অনুভব করলো ওদের গানের মাঝে, সবচেয়ে বড় কথা হল, সবাই খুব রোমান্টিক মুডে ছিল" তাই হয়ত আনন্দটা একটু বেশিই ছিল।
গান শেষে পরী ফাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলল,
- তুমি আসলেই একটা পাগল।
- হুম তোমার জন্য।
- যাহ দুষ্টু, ফাজিল একটা,
- আমি তোমার দুষ্ট। শুধু তোমার।
- ভালোবাসো??
- কেন? সন্দেহ আছে নাকি?
- হ্যাঁ আছে।
- কিসের সন্দেহ?
- জানি" একদিন আমাকে ভুলে যাবে।
- আর কি জানো?
- আর জানি অনেক দূরে হারিয়ে যাবে।
- আর?
- আর জানি আমাকে একটুও মিস করবেনা।
- আর??
- আর বলবো না যাহ্।
- বল না শুনি। খুব ভালো লাগছে শুনতে।
- ভালো তো লাগবেই সত্য কথা যে।
- কানের নিচে দুইটা খাবে? এতো বেশি বেশি বুঝ কেন?
- আরে' রেগে যাচ্ছ কেন?
- রাগ করিনি, ব্যথা পেয়েছি।
- কোথায় দেখি তো?
- বুকে কান লাগিয়ে দেখো, ভেতরটা ব্যথায় কাঁদছে।
- কই দেখি? হাতটা সরাও, জড়িয়ে ধরে শক্ত করে বুকে মাথা রাখি।
- আসো বুকে আসো, এভাবেই বুকে রাখবো তোমায় জীবনভর।
হৃদয় সাম্পানে যখন হাওয়া লেগে যায়, তখন কি আর বিবেকে ভারসাম্য থাকে? থাকেনা..! তাই হয়ত আজ আর ওদেরও নেই, পরী ফাহিমের বুকে মাথাটা রাখলো আর ফাহিম ওকে পরম আদরে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো, হঠাৎ হাততালির শব্দে পরীর স্থবির ফিরে ফেল, সাথে সাথে সে নিজেকে ফাহিমের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে কিছুটা লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে যেতেই ফাহিম ওর হাতটা খপ করে ধরে ফেলতেই পরী হাতটা ছাড়িয়ে মুখে একটা ভেংচি কেটে চলে যাচ্ছে, ফাহিম ওর চলে যাওয়া দেখে মনের অজান্তেই মুখ থেকে গানের সুর বেরিয়ে গেল...!
- চাঁদের কন্যা চাঁদকুমারী হেলিয়া দুলিয়া যায়,
রুপ যেন তার মনের গাঙ্গে" ঢেউ তুলিয়া যায়।
বুকের পাঁজর ভাঙিয়া মনটা" কাড়িয়া নিলো হায়!
বন্ধু তোরা বলনা আমার' কি হবে উপায়..???
চাঁদ বদনি মুখ যে তাহার" দিগল কালো কেশ!
লাজুক লাজুক মুখের হাসি" দেখতে লাগে বেশ।
কন্যা যখন হেঁটে চলে" নূপুর বাজে পায়।
বন্ধু তোরা বলনা আমার' কি হবে উপায়..??
কন্যা যখন শোভাস ছড়াই" গুজিয়া খোপাই ফুল, ঝনাক ঝনাক আওয়াজ তোলে' তাহার কানের দোল!
সেই না আওয়াজ শুনিয়া আমার' প্রাণটা নেচে যায়!
বন্ধু তোরা বলনা আমার" কি হবে উপায়..??
গান শেষ হতেই হাত তালির সাথে সাথে সবার মুখে একই সুরে একটা আওয়াজ ভেসে এলো "ওয়াও"।
এবার শরিফ বন্ধুদের অনুরোধে স্টেজে উঠে কালামের হাত থেকে স্পিকারটা হাতে নিয়ে বলল,
- সম্মানিত উপস্থিতি এখন আপনাদের সামনে গান পরিবেশন করবেন চৌধুরী পরিবারের দ্বিতীয় রাজকুমারী মিস সুফিয়া পারভিন পরী, আমি উনাকে মঞ্চে আসার জন্য সবার পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
শরিফের কথা শুনে পরীর মাথা যেন ঘুলিয়ে গেল, ওরা আজকে এতটাই আনন্দিত যে" যার কোন পরিমাপ করা পসিবল না, তাই পরীরই বা কি আর করার থাকে। এবার সে অনন্যা ও সানজানার কাছে গিয়ে বলল,
- এইযে আপুরা' আপনাদের হাফপেন্ট গুলার হয়ছেটা কি, উনারা সবাই আমার পিছনে লাগলো ক্যান? অনুষ্ঠানটা শেষ হোক, সব কয়টারে কোরবানি দিমু।
পরীর কথা শুনে ওরা হেসে দিল, আর পরীও মুচকি হেসে স্টেজে উঠে ফাহিমের চোখে চোখ রেখে মনের সুখে গেয়ে উঠলো....!
- বাড়ির পাশে মধুমতী" পূবাল হাওয়া বয়রে, বন্ধু প্রেমের রঙ লাগাইয়া মনে দিল ব্যথারে...!!
ভাদ্রমাসে আকাশেতে সাদা মেঘের বেলা, কোথায় রইলা প্রাণ বন্ধুয়া রাখিয়া একেলা।
কষ্টে কাটে দিন রজনী' বুকে ব্যথার ঢেউরে...!
বন্ধু প্রেমের রঙ লাগাইয়া' মনে দিল ব্যথারে।
বাড়ির পাশে মধুমতী...!
চৈত্রমাসে মাটির বুকে ধরে দারুন খরা" বন্ধু বিনে আমার জীবন প্রাণ থাকিতেও মরা।
সব কথা কি যায়রে বলা' আমি ভালো নাইরে,
বন্ধু প্রেমের রঙ লাগাইয়া" মনে দিল ব্যথারে।
বাড়ির পাশে মধুমতী" পূবাল হাওয়া বয়রে, বন্ধু প্রেমের রঙ লাগাইয়া প্রানে দিলো জ্বালারে।
বাড়ির পাশে মধুমতী.....!!
গান শেষ হতে না হতে বৃষ্টির মত হাততালির শব্দে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠলো। পরক্ষনে সানজানা অনন্যা, রিয়া ওরা স্টেজে উঠে পরীকে বুকে জড়িয়ে অভিনন্দন জানালো, ওদের সাথে ফাহিম, শরিফ, রানাও স্টেজে উঠে পড়লো।
অল্পক্ষনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মেঘলারা রুমে ফিরে গেলো।
-
-------চলবে-------
-

No comments

জনপ্রিয় পোষ্ট

  জন্ম নিবন্ধন করবেন ভাবছেন, আর ভাবনা নয় সপ্ন এখন সত্যি সব এখন হাতের মুঠোয়, [ http://bdris.gov.bd/br/application ]( http://bdris.gov.bd/br...

Powered by Blogger.