Header Ads

Header ADS

> "তৃপ্ত ছায়া" <,

> "তৃপ্ত ছায়া" <,
-
------- " পর্ব পঞ্চান্ন",
-
আকাশ দিব্বি ঘুমাচ্ছে, সকাল নয়টা বেজে গেল অথচ উঠার কোন নাম গন্ধই নেই।
সকাল সকাল স্বর্গীয় ঘুমের মাঝে নরক যন্ত্রণা দেয়ার জন্য তার ছোট বোন তন্নিই যথেষ্ট।
দশ মিনিট ধরে কানের কাছে বকবক করেই যাচ্ছে,
- এই ভাইয়া উঠনা, আর কত ঘুমাবি?! দেরী হয়ে যাচ্ছে তো!!
কিন্তু কি কারনে দেরিটা আসলো তা বলছেনা দেখে আকাশও কম না, যত ইচ্ছে ডাকুক তবুও সে এখন উঠছে না, ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে, দেখতে চাই পাগলি বোনটা কি করে!?
অবশ্য ডাকা ডাকিতে ক্লান্ত হয়ে তার শেষ ট্রিটমেন্ট পানি চিকিৎসা হবে। এটা আকাশের ভালো করেই জানা আছে। পানি চিকিৎসা দেয়ার পূর্ব মুহুর্তে উঠে গেলেই বাঁচে।
- কিরে তন্নি, আমাদের নবাব এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই?!
বাহ, আকাশের শ্রদ্ধেয় আম্মাজান হাজির। তার পূর্ব পুরুষের কেউ নবাব ছিলো বলে জানা নেই। তবে আম্মুর কাছে নবাব উপাধি পেয়ে ইদানীং নিজেকে কেমন যেন নবাব বলেই মনে হয়। ওর আম্মু যখন ওর উপর প্রচন্ড রেগে যায়। ঠিক তখনই তাকে নবাব বলে ডাকে। কিন্তু এই মুহুর্তে রেগে যাওয়ার কারন কি?! ঘুম থেকে এখনো উঠেনি এটার জন্য রেগে যাওয়ার কথা না। কাহিনী কি এখনো বুজতে পারল না।
যাই হোক, এখন অপেক্ষায় আছে না জানি আবার কবে আব্বাজানের মধুর কন্ঠ শোনতে হয়! উনার মধুর কন্ঠ যখন কানে আসবে আর অপেক্ষা করা যাবেনা। লাফ দিয়ে উঠে দশ মিনিটে ফ্রেস হয়ে পাঁচ মিনিটে বের হতে হবে। তা না হলে তার উপর দিয়ে হালকা একটা সাইক্লোন বয়ে যাবে।
অনেকক্ষন হলো কারো কোন শব্দ নাই। সবাই কি রুম থেকে চলে গেলো নাকি?! চোখ মেলে দেখবে ঐ ইচ্ছেও করছে না। তবে তার কেমন যেনো মনে হচ্ছে তন্নি পানি থেরাপি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মাঝে না উঠলে বিচানায় গোসল করতে হবে।
এবার একটু একটু করে চোখের পর্দা সরাতে লাগল আকাশ, আশেপাশে কেউ আছে কিনা দেখতে যাবে, ঠিক তখনই দেখে স্টাচু অব লিবার্টির মতো ওর শ্রদ্ধেয় আব্বাজান দাঁড়িয়ে আছে।
আকাশের চোখ খোলা দেখেই আব্বু সু-মধুর কন্ঠে বলে উঠলেন,
- বাবা, আরেকটু ঘুমান। আপনাকে কষ্ট করে উঠতে হবেনা আজকে!!
আকাশও ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে হাসিমাখা মুখে বলল,
- শুভ সকাল আব্বু,
উনি শুভ সকাল শুনে অন্যদিকে ফিরে একটু মুচকি হেসে, আবার ওর দিকে তাকিয়ে এখন অগ্নীদৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
আজকে সবাই তার উপর এতো রেগে আছে কেনো বুজল না। এমন কোন অন্যায় করেছে বলে তো মনে হয়না। ঘুম থেকে দেরী করে উঠা তো তার নিত্যদিনের অভ্যাস। এতে এমন রিয়্যাক্ট করার তো কথা না!!
আকাশ আব্বুর দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে লাফ দিয়ে বিচানা থেকে উঠে ফ্রেস হতে গেল। ফ্রেস হয়ে আবার রুমে এসে দেখে ওর আম্মু রুমে এসে খাটের উপর বসে আছে।
- আম্মু বড্ড খিদে পাইছে..
- খুদা লাগছে তো আমাকে বলছিস কেন? প্রথমে তোর ঘুম খা,
তারপর তোর মোবাইল খা,
তাতে যদি পেট না ভরে আমার মাথা খা,
তাও যদি পেট না ভরে তাইলে খাবার খা,
- হা হা হা, আম্মু আমারে অনেক ভালবাসে, আমিও.....!
- তো তোর সেই মায়ের কাছে যা, আমার কাছে কি?
- সত্যি বলছ তো?
- হারামজাদা' তোরে কে নিষেধ করলো, যা ভাগ!
এই বলে আকাশের আম্মু উঠে মুচকি হেসে কিচেনে গেল ছেলের জন্য নাস্তা রেডি করতে, একটু পর আকাশ গিয়ে পেছন থেকে ওর আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরল,
- আবার কি চাই?
- এই পৃথিবীর সব চেয়ে দামী মানুষটা হল আমার আম্মু, আমি উনাকে চাই,
- আর?
- পৃথিবীর বুকে আমার একটা ছায়া আছে, তা হল আব্বু, উনাকেও চাই,
- পাগল ছেলে, আর কি চাস?
- আর হে' আমার একটা কলিজার টুকরা ছোট্র বোন আছে, যে আমার সাথে সারাক্ষণ টম এন্ড জেরির মত করে। তাকে আমি খুব করে চাই।
তন্নি এতক্ষণ উনাদের কথাগুলো শুনছিল, টম এন্ড জেরি শব্দটা শুনে তন্নি গেল রেগে!
- কি???? ভাইয়া আমি তোমার সাথে টম এন্ড জেরির মত করি? যাহ তোমার সাথে আর কোন কথা নেই।
- থুক্কু আপু, আমি ভুল করেছি, এমন ভুল আর কখনো হবেনা, বিশ্বাস না হলে এদিকে আয়, তোর কান ধরে বলি।
- আম্মু! দেখো না, ভাইয়া নাকি আমার কান টেনে দিবে!
ওদের খুনসুটি দেখে ওর আম্মু এবার ধমক দিয়েই বলল,
- কিরে' তোরা কি এখন যুদ্ধ শুরু করবি? নাকি টেবিলে গিয়ে খেতে বসবি?
আকাশ আর কোন কথা না বলে সবাইকে নিয়ে নাস্তা সেরে নিল।
তারপর আকাশ বের হয়ে বাগানবাড়িতে গিয়ে চেয়ার একটা টেনে বসলো। ধীরেধীরে সকালের নরম রোধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে, আকাশ ভাবনার জগতে ডুব দিল। আজকের দিনটা তার একাকীত্ব জীবনের শেষ দিন, কি হতে কি হয়ে গেল;
একদিকে মেঘলা অন্য দিকে ফ্রেন্ড সার্কেল। বেচারা গুলো তার জন্য কত কষ্টই না করতেছে, সম্পর্ক গুলো হয়ত এমনিই হয়, যদিও সম্পর্কের বাঁধন দেখা যায় না, ছোঁয়া যায়না, এটি অদৃশ্য এক বাঁধন। সম্পর্ক হয় বন্ধুত্বের, সম্পর্ক হয় ভালবাসার, সম্পর্ক হয় একসাথে চাঁদের আলোয় কিছুটা পথ হাঁটার, সম্পর্ক হয় খুনসুটিতে মেতে থাকার, সম্পর্ক হয় কাছে থাকার।
চলার পথে অনেকের সাথে সম্পর্ক হয়, সময়ের স্রোতে অনেক মানুষ হারিয়ে যায়। কেউ ভুল বুঝে, কেউ অকারণে ঝগড়া করে, আবার কেউবা মান-অভিমান করে। একসময় নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেই মানুষগুলো আবার ফিরে আসে কিন্তু তখন সম্পর্কের বাঁধনটা আগের মত থাকেনা, অবিশ্বাসের চাঁদরে ঢাকা পড়ে যায়।
একটি পবিত্র সম্পর্কে প্রিয় মানুষটির একটুখানি অবহেলা সহ্য করা যায়না, তার একটুখানি কটু কথা সহ্য হয়না, প্রিয় মানুষটিকে খুব বেশী ভালবাসা হয়তো তাই এমন হয়। তার অবহেলার কারণে নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে সম্পর্কের মায়াজাল থেকে, কিন্তু সম্পর্কের বাঁধন টাতো ছিন্ন করা হয়না। আর ঐদিকে বিপরীত মানুষটা ভাবে সব শেষ করে দিতে চাচ্ছি তাই এমন করছি। কিন্তু একটিবারের জন্য এটা কল্পনা করে না, যাকে এত বেশী ভালবাসি তার সাথে রাগ করি রাগ ভাঙাবে বলে, অভিমান করি আমাকে বুঝবে বলে, কান্না করি কষ্টটা বুঝবে বলে, চোখের জল পড়ার আগে আমাকে হাসাবে বলে।
কিন্তু এমনতো আর হয়না উল্টো ভুল বুঝে সেই মানুষটা দূরে চলে যায়, হারিয়ে যায় অজানা কোন গন্তব্যে।
ভালবাসার সম্পর্কগুলো অনেক আলাদা, অনেক হৃদয়স্পর্শী। আবার সেই সম্পর্কের অবহেলাগুলো খুব বেদনাদায়ক' খুব কষ্টকর। সব সম্পর্কে কম বেশী দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে। কষ্টের অনুভূতি ছাড়া কখনো সম্পর্ক গভীর হয়না, সম্পর্কের আসল মর্যাদা বুঝা যায়না। সেটি হতে পারে পরিবারের সম্পর্ক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, কিংবা প্রিয় মানুষটির সাথে বাঁধা অবুঝ সম্পর্ক। এই সম্পর্ক কোন লজিক মানেনা, কোন বাস্তবতা মানেনা, এই সম্পর্কের সিদ্ধান্তগুলো সবসময় মন থেকে নিতে হয়, আর অবচেতন মন কখনো মানুষকে ভুল সিদ্ধান্ত দেয়, কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়। সবার জীবনেই একটা সম্পর্ক প্রয়োজন, আর একটি টেককেয়ার করার মত মানুষ, সেই মানুষটি হতে পারে জীবন সঙ্গী, হয়ত বন্ধু। যে মানুষটি সারাটি জীবন তার পাশে থাকবে, তার মন খারাপের সময় মন ভাল করার সঙ্গী হবে, যে মানুষটি তার মুখে একটু হাসির জন্য অনেক কিছু করবে। যে মানুষটি তাকে কখনো কাঁদতে দিবেনা, কখনো হারিয়ে যেতে দেবেনা, কোন শর্ত আর অজুহাত ছাড়াই ছায়া হয়ে তার পাশে থাকবে। তাই হয়ত মেঘলা কখনো তাকে ছেড়ে যায়নি, আর হারামী গুলো আজ পর্যন্ত তাকে কখনো একা হতে দেয়নি..!!
এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা হাতে নিয়ে শরিফকে ফোন দিল। কিন্তু শরিফ ফোন রিচিভ করেনি দেখে আকাশ চেয়ার ছেড়ে রুমে ফিরে এলো।
বাসায় এসে দেখে বাড়িটা চোখের পানিতে সাগর হয়ে যাচ্ছে! ভাবলো বাড়ির কেউ দুর্ঘটনার কবলে পরছে হয়তো! বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো তার!
তন্নিকে জিজ্ঞেস করলঃ-
- কিরে তন্নি, কার কী হইছে?
এই কথা জিজ্ঞেস করে যেন মহাপাপ করেছে! তন্নি কান্নার গতিবেগ আরো বাড়িয়ে দিলো! আকাশ ভেবাচেকা খেয়ে সোজা আম্মুর রুমে গিয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করাতেই উনি হেসে উঠে বললেন,
- ফাজিল ছেলে, আমার মেয়েটাকে রাগাই দিয়ে এখন বলছিস কি হয়েছে?
আকাশ এবার হাফ ছেড়ে বাঁচল, তার বুঝতে আর বাকী রইলো না এই কান্নার রহস্য কি? আলহামদুলিল্লাহ সূরা পড়ে বুকে দুইটা ফুঁক দিল। হ্যাঁ এবার একটু আরামবোধ করছে। তারপর ধীরেপায়ে তন্নির পাশে গিয়ে বসে আকাশ, মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
- তুই না আমার চকলেট আপু, এভাবে রাগ করে কি কেউ কাঁদে বল?
- তুমি পারলা কেমনে ভাইয়া?
- আচ্ছা কান ধরেছি, আর কখনো টম এন্ড জেরি ডাকব না। কান্না বন্ধ করলে একটা সারপ্রাইজ আছে।
- লাগবে না তোমার সারপ্রাইজ।
তখন আকাশ রুমে গিয়ে কয়েকটা চকলেট এনে তন্নির হাতে দিয়ে বলল,
- তোর জন্য চকলেট এনেছিলাম কালকে, দিতে ভুলে গেছিলাম, ধর' এই নে তোর চকলেট।
আকাশ ওর জন্য সত্যি সত্যি চকলেট নিয়ে এসেছে দেখে তন্নির রাগটা মুহূর্তেই হাসিতে পরিণত হলো, রক্তের সম্পর্ক গুলো হয়ত এমনই, বোনটাকে বিয়ে দেয়ার পরও বোনের প্রতি ভালবাসা টুকু একটুও কমেনি, সেই আগে যেমন অফিস থেকে ফেরার পথে একমাত্র ছোট্র বোনটার জন্য চকলেট বা এটাসেটা নিয়ে আসতো, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। খুশিতে তন্নির মনটা ভরে গেল, চকলেট গুলো হাতে নিয়ে তন্নি বলল,
- ভাইয়া এতদিন তোমার মনে আছে কিভাবে যে' আমার জন্য চকলেট আনতে হয়?
- পাগলি, তুই তো আমার কলিজার টুকরা, তুই চলে গেলি টিক আছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে তোর জন্য কত কিছু মনের অজান্তেই নিয়ে আসি, এসে দেখি তুই নেই, সেগুলো স্ব-যত্নে ড্রয়ারে জমা হয়ে আছে।
কথাগুলো শুনে তন্নি ভাইয়া" বলে আকাশকে জড়িয়ে ধরলো, আকাশ তন্নির কপালে একটা স্নেহের পরশ দিয়ে বলল
- আচ্ছা সকালে কি হয়েছিল তাই বল,
- মেঘলা ভাবি তেত্রিশবার কল দিয়েছে তোমার মোবাইলে।
- কি বলিস? তাহলে এই জন্যই এতকিছু?
- হুম, ভাবি আবার আম্মুকে ফোন দিয়েছিল।
খাইছেরে, এখন মেঘলাকে কি জবাব দেবে সে, সাতপাঁচ ভেবে তন্নিকে বলল,
- আচ্ছা তুই থাক, আমি একটু বের হচ্ছি!
তারপর আকাশ রুম থেকে বের হতেই ফোনটা বেজে উঠলো,
- হ্যালো! আকাশ ভাই?
- জ্বি বলুন, কে বলছেন প্লিজ?
- আমি হাসান আহমেদ(ফাহিম)
- আরে ফাহিম কেমন আছ?
- এইতো আছি আলহামদুলিল্লাহ, তোমার কি অবস্থা?
- আলহামদুলিল্লাহ, ফোন করেছ ভালই হয়েছে, আসলে তোমার এই নাম্বারটা আমার কাছে ছিলনা, তাই চিনতে পারিনি, আচ্ছা যাইহোক' আমি তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম, দাওয়াত দিয়ে এসেছি, তুমি কিন্তু বিকেলের মধ্যে বাসায় আসবে।
- আচ্ছা টিক আছে চেষ্টা করবো।
তারপর আকাশ ফোন রেখে দিল।
-
এদিকে' এলার্মের শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেলো শরিফের। সবাই বলে পাশে বউ থাকলে এলার্মের আর দরকার হয় না। সারাদিন সেটাই বাজতে থাকে। কিন্তু শরিফের হয়েছে উলটো।
"
শরিফ তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে এলো। এদিকে আকাশদের বাসায় যাওয়ার প্রায় সময় হয়ে গেছে। কিন্তু নাস্তার কোন খবর নেই। শরিফ রেডি হয়ে এসে দেখে সানজানা এখনও ঘুমুচ্ছে। শরিফ ফ্রেশ হওয়ার আগে একবার ডেকে গিয়েছিল, কিন্তু মহারানীর সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। ইনি এখনও ঘুমে।
শরিফ এবার সানজানকে একটু জোরেই ডাক দিল,
- সানজানা, এই সানজানা,
মেয়েটা ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বললো,
- কি হয়েছে?
- হয়নি কোনটা, আমি আকাশের বাসায় যাব।
- তো যাও। আমাকে একটু ঘুমুতে দাও।
বলে কি মেয়েটা? শরিফের চেয়ে ওর ঘুমটাই বড় হয়ে গেলো। শরিফ আবার বলল..!!
- আমার নাস্তা?
- ইস ভুলেই গেছিলাম। তুমি দাঁড়াও আমি এক্ষুনি করে দিচ্ছি।
কথাটি বলেই সানজানা বিছানা থেকে উঠে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে প্রায় পড়ে যাচ্ছে, শরিফ যদি না ধরতো তাহলে টিকই পড়ে যেত। শরিফ ওকে এবার বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল,
- তোমার নাস্তা বানাতে হবে না। আমি ওখানে গিয়ে খেয়ে নেবো। ঘুমাও তুমি।
তারপর শরিফ বাসা থেকে বের হতেই আকাশের ফোন,
- কিরে বেটা, ফোনটা রিচিভ করতে কি কষ্ট হয়?
- সরি দোস্ত, কুখ্যাত, আমার ফোনটা সাইলেন্ট ছিল তাই বলতে পারিনা।
- অহ, তাহলে অটো মোবাইল রেখে লাভ কি, সেটা পানিতে কতক্ষণ চোবা।
- তাহলে আজকে নতুন ফোন একটা পামু, মাশাল্লাহ, আল্লাহই তোরে রহমত করুক।
- দূর হারামি, ভাষণ অফ করে রানাকে একটা ফোন লাগা!
- তুই দিস নাই?
- দিয়েছিলাম,
- কি বলল?
- আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারটি এখন অকেজো হয়ে আছে।
- হা হা হা, অহ এই কথা, আচ্ছা আমি দেখছি দোস্ত, তুই একদম চিন্তা করিস না, আমি ওরে আধাঘণ্টার মধ্যে কান ধরে তোর দরবারে হাজির করমু।
শরিফ ফোনটা কেটে বাইকটা বের করে একটানে রানাদের বাসার গেইটের সামনে গিয়ে এবার রানাকে ফোন দিল,
শরিফের ফোনের কারনে শীতের সকালের আরামের ঘুমটা ভেঙ্গে গেল রানার। ঘুম ঘুম চোখে সে ফোনটা রিসিভ করল!
- হুম দোস্ত, বল।
- ভাই তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস আর অন্যদিকে আকাশ আমায় ফোন দিয়ে বিরক্ত করে ফেলছে।
- কেন? ওর আবার কি হলো?
- ওরই তো সব। ওর যে কালকে ম্যারেজপার্টি ভুলে গেলি? আকাশ আমায় ফোন দিতেছে, তোরে কেন দিচ্ছে না?
- আমি তো মনে হয় ওই ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দিছি।
- তাই তো বলি আকাশ আমায় ফোন দিয়ে কেন বলছে রানার নাম্বার নাকি মরে গেল?
- হুমম। আচ্ছা দোস্ত যাবি কখন আকাশের বাসায়?
- দোস্ত আমরা তো আর খেতে যাবো না বরং বিয়ের জন্য আনুষঙ্গিক বাজার করতে যেতে হবে। আর ওর গায়ে হলুদের মঞ্চ ও তো সাজাতে হবে।
- আমার মত বাচ্চা পোলা এতো কাজ করতে পারবো।
- ওই বেটা এইসব কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আমার বাসায় আয় তো।
- তুই ওয়েট কর, আমি ৫ মিনিট ঘুমিয়ে আসছি।
- কপাল খারাপ হলেই তো আবার ঘুমাবি, হারামী তাড়াতাড়ি আয়।
- আচ্ছা আসছি।
আর বিছানায় শুয়ে না থেকে ওয়াশরুমে চলে গেল, আরো দেরি করলে শরিফ হয়ত বাসায় এসে তাকে যেভাবে আছে ওভাবেই নিয়ে যাবে। শরিফ যেমনই হোক, খুব টাইম মেন্টেন করে চলতে পারে।
রানা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে শরিফকে ফোন দিল.
- কিরে দোস্ত আমারে তারাতারি রেডি হওয়ার কথা বলে নিজে কি ফেশিয়াল করতে বসছিস।
- কেন রে সবাইকে কি নিজের মত ভাবিস?
- এখানে ভাবার কি আছে, যা সত্য তাই বললাম।
- ওই চুপ, আস্তে বল। আমি এমন না আর তুই তারাতারি আয়। আমি তোর বাসার বাইরেই আছি।
- আচ্ছা আসছি।
তারপর রানাকে নিয়ে আকাশদের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। আকাশের বাসাটা কাছেই তাই হেঁটেও যাওয়া যায়, কিন্তু দেরি হওয়ার কারনে গাড়ি নিয়ে যেতে হল।
ওরা অল্পক্ষনের মধ্যে বাসায় পৌছে গেল। রানা আকাশের সামনে যেতেই আকাশ ওর দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন রানাই ওর বউকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
তারপর আকাশ শরিফকে বলল....
- কিরে তুই যে এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাস, কাল যে আমার ম্যারাজপার্টি এটাও ভুলে গেছিস।
- ও মা কাল বুঝি তোর বিয়ে!! কয়েক দিন আগেও না তুই হাফ প্যান্ট পরে ঘুরতি।
- ওই চুপ হারামি, তোর সাথে কেন যে আমার ছোটকালে দেখা হইছে। প্রায় সময় দেখি এইসব কথা নিয়ে খোঁচাস।
- ভালই হইছে।
- আচ্ছা" নাস্তা তো বোধহয় কেউ করিস নাই, আগে খেয়ে নে, নাহয় আজীবন খোঁচাতে থাকবি।
- হা হা হা" তোর তো দেখি বয়সের সাথে বুদ্ধিও গজাইছে।
- আচ্ছা ভাই তাড়াতাড়ি নাস্তা সেরে আমায় উদ্ধার কর।
আর তর্ক না করে ওরা নাস্তা সেরে যার যার কাজে লেগে পড়লো। মার্কেটে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করে বাসায় ফিরে সবাই একসাথে লাঞ্চ সেরে নিল।
বিকেলে যথাসময়ে কালাম উপস্থিত হল, এর কিছুক্ষণ পর ফাহিমও এলো, সবার সাথে ভাল মন্দ কৌশল বিনিময় শেষ হতেই রানা এলো গেস্ট রুমে।
ফাহিমকে দেখে রানা বলল,
- ওমা এটা কেরে? আমাদের ফাহিম সাহেব নাকি?
- কিরে চান্দু' তোর কি ইদানীং পাওয়ারি চশমা লাগে?
- কেন বলতো?
- না মানে" আমাকে দেখেও চিনতে পারতেছিস না তাই জানতে চাইলাম।
- অহ' তুই একটা কিনে দিবি?
- আরে দুর' ভাবিসাব তোরে আবার চার চোখ কানা ডাকবে! তা আমার সহ্য হবেনা।
- বুঝছি' এবার থাম, তুই দেখি মোরে বোড়াকালে বেইজ্জত করবি।
কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠলো, এবার শরিফ বলল,
- কিরে ফাহিম" শুনলাম তোর নাকি উন্নতি হয়ছে, তুই নাকি বিয়ে শাদি করতেছিস?
- তুই তো দেখি বিরাট সমস্যার কথা মনে করাই দিলি।
- এটা তো খুশির খবর, এখানে তুই সমস্যা পাইলি কই?
- দুঃখের কথা কেমনে যে কই! শুন; গতরাতে সপ্নে দেখলাম; বিয়ের খুশিতে আমি স্পাইডারম্যান হয়ে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি, এই খরবটা যেই ফোন করে বউটাকে বলতে গেলাম' তখনই মহারাণী আমায় আদেশ করলেন: উড়া শেষ হলে' আসার সময় বাজার থেকে এককেজি আলো নিয়ে এসো। এবার বুঝ মেজাজটা কেমন হয়???
কথাটা শুনে সবাই হাসতে হাসতে শেষ।
কিছুক্ষণ গল্প শেষে যার যার মত কাজে লেগে পড়লো।
ছাদটা মোটামুটি বড় হওয়াই অনেক সুন্দর করে ওরা সন্ধ্যার আগেই স্টেজ রেড়ি করে ফেলল। আকাশ আনুষঙ্গিক কাজ সেরে ছাদের উপরে উঠলো, স্টেজ দেখে তো অবাক, বলতে গেলে স্টেজটা যা সুন্দর হলো তাতে প্রশংসার দাবীদার।
আকাশ তখন শরিফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
- মাশাল্লাহ! যতেষ্ট সুন্দর হয়েছে, অল্প কিছুতে এতো সুন্দর করে যে তোরা সাজাতে পারিস তা জানলে সেদিন তোদের বিয়ের সময় রবের সাজ রেখে স্টেজ সাজাতে নামিয়ে দিতাম। হা হা হা...!
- এটারে কই কপাল, ইদানীং তুই নাকে কম দেখিস নাকিরে? দেখছিস না এটা কার কারিশমা?
- তোরাই তো করলি নাকি?
- ওই যে ঐদিকে দেখ আমাদের ডিজাইনার।
শরিফ তখন হাতের ঈশারাই ফাহিমকে দেখিয়ে দিল। ফাহিম তখন স্টেজে কি একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত, সে আকাশকে দেখে বলল,
- স্টেজ কেমন হল ভাই?
- মাশাল্লাহ! অনেক সুন্দর হয়েছে, তুমি তো দেখি অনেক সুন্দর ভাবে ডিজাইন করতে পারো।
- কি যে বলো, এসব তো ওরাই করেছে, আমি জাস্ট টিক মত বসিয়ে দিয়ে ওদের কাজে একটু হেল্প করলাম।
- আচ্ছা তাড়াতাড়ি শেষ করে নাও, রাতে আবার মেঘলাদের বাসায় যেতে হবে।
অল্পক্ষনে ওরা সব কিছু রেড়ি করে নিচে নেমে এলো।
তারপর ওরা বাসায় ফিরে গিয়ে সন্ধ্যায় সানজানা" অনন্যা ও রিয়াকে নিয়ে ওরা আবার আকাশের বাসায় এসে সেখান থেকে তন্নিকে সাথে নিয়ে মেঘলাদের বাসায় পৌছে দিল।
.
রাতে শরিফ" রানা" কালাম ও ফাহিম মিলে মেঘলাদের বাসায় স্টেজ সাজাচ্ছে।
হঠাৎ ফাহিম উঠে শরিফকে বলল,
- সব কিছু তো টিকটাক আছে কিন্তু গোলাপ কেন কম আনলি?
তখন শরিফ খেয়াল করলো কথাতো সত্য, কিন্তু সে তো অনেক গোলাপ এনেছে কম হওয়ার তো কথা ছিলনা, কিন্তু এখানে কম পড়লো কেন? এগুলো তো রানাকে দিয়ে বিকেলেই পাটিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘটনা কিছুই বুঝে উঠতে না পেরে রানাকে বলল...
- কিরে রানা! তুই কি এখান থেকে গোলাপ কাউকে দিয়েছিলি?
- আসলে একটা মেয়ে বিকালের দিকে বলল ওরা সাঁজবে, সেজন্য গোলাপ ফুল লাগবে, তাই বলছিলাম ওর যত গুলো ফুল লাগে তা যেন নিয়ে যায়। কিন্তু সাঁজার জন্য যে এতো ফুল লাগবে তা তো জানতাম না।
- তা জানবি কেন? মেয়ে দেখলেই তো তুই গলে যাস। লুলা তোরে যদি অনন্যারে দিয়া ধোলাই না খাওয়াই তো আমি....!
- এবাবে বলছিস কেন? আমার একটা ইজ্জত আছেনা?
- হইছে থাম। এবার বল মেয়ে গুলো কোন রুমে আছে? এটা কি জানিস নাকি তাও জানিস না।
- মনে হয় দ্বিতীয় তলার বাম পাশের একটা রুমে।
- ওকে তোরা মঞ্চ সাঁজা, আর ফাহিম তুই একটু গিয়ে দেখ তো কোন ফুল বাকি রাখছে নাকি সবই চুলে লাগাইছে!!
- ওকে যাচ্ছি।
এই বলে ফাহিম নিচে নেমে এলো, পঞ্চম তলায় দেখা হল তন্নির সাথে, তার কাছ থেকে শুনল সব মেয়েরা নাকি একটা রুমে সাঁজছিল। ফাহিম তখন আর দেরি না করে রুমের সামনে গিয়ে দেখে রুমটা ভেতর থেকে বন্ধ।
তাই সে রুমে টুকা দিতেই একটা মেয়ে শুধু দরজাটা হালকা করে খুলে গলাটা বের করে বলল...!
- এই যে' কি চাই?
- এই রুমের একটা মেয়ে ছাদ থেকে অনেক গুলো গোলাপ নিয়ে আসছে। সেই মেয়েকে আমি চাই।
- কেন? ওর সাথে কি দরকার?
- ওর সাথে আমার কোন দরকার নেই, তবে যে ফুল গুলো নিয়ে আসছে সেই ফুল গুলো ফেরত চাই।
- ফুল গুলো তো সব কাজে লেগে গেছে।
- ওরে বাবা! কি এমন কাজ যে সবই লেগে গেছে?
- সবাই খোপায় বাঁধছে।
- আমি কিছু জানি না, আমার ফুল গুলো লাগবে। নয়ত গায়ে হলুদের মঞ্চটা সুন্দর লাগবে না।
- ফুল তো দেওয়া যাবে না। কম পরলে বাজারটা বাসা থেকে বের হয়ে ডান দিকে।
- ওই মেয়ে তুমি আমায় বাজার চিনাচ্ছো।
- ধরে নিন তাই করছি।
- ওই ফাজিল মেয়ে তোমার নামটা কি? আমি মেঘলা ম্যাডামের কাছে তোমার নামে কমপ্লিন করবো।
- হি হি হি,...মেঘলা আপু আমার কচু করবো।
- আজিব তো, ম্যাডামকে আপু ডাকো আর আমার সাথে ঝগড়া করতেছ? জানো' আমি উনার থেকেও ৫ মাসের বড়?
- তো আমি কি করবো? আমার যাকে যা ইচ্ছা তাকে তাই ডাকবো। এখন আপনি কেন ঝগড়া করতেছেন?
- শুরুটা তো তুমিই শুরু করছো। আচ্ছা এবার বলো তোমার নামটা কি?
- ফাজিল!
- বাহ্ অনেক কিউট নাম তো।
আর কোন কথা না বলে মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিলো।
তখন ফাহিম ভাবে" মেয়েটির কথাবার্তা কি লংকারে বাবা! তবে দেখতে মাশাল্লাহ' বেশ কিউট! কিজানি ম্যাডামের কি হয়!
পরে হাসতে হাসতে ফাহিম আবার ছাদে ফিরে আসে, তাকে খালি হাতে ফিরে আসতে দেখে শরিফ বলল,
- কিরে কি হল?
ফাহিম তখন ঘটনাটা শুনানোর পর সবাই হেসে উঠে, তারপর রানাকে পাটিয়ে ফুল নিয়ে এসে স্টেজ সাজিয়ে নিল।
স্টেজ সাজা শেষ হতেই......!
- বাহ' বাহ' অনেক সুন্দর হয়েছে।
কথাটা শুনে শরিফ পেছন ফিরে থাকাতেই দেখে কয়েকটা মেয়ে ছাদে এসেছে স্টেজ দেখতে। ওরা স্টেজ দেখে উপরিউক্ত কথাটি বলল,
- আপনাদের খোঁপার ফুল গুলো দিয়ে দিলে আরো সুন্দর হতো।
- ফুল গুলো আপনারাই দিলেন, আবার কিছুক্ষণ আগে ওই ভদ্রলোকটাকে পাঠালেন, এখন আবার আপনি বলতেছেন। মানে কি?
এবার কারো বুঝার বাকী রইলো না এই সেই মেয়ে, যে কিনা ফুল আনতে গেলে ফাহিমকে ধমকি দিয়েছিল। শরিফ এবার দুষ্টুমি করে বলল,
- সুন্দরীরা রাগলে আরো সুন্দর হয়ে উঠে, তাই একটু...
মেয়েটি এবার লজ্জা পেয়ে আরো রেগে গেল,
- পাম মারার জন্য মানুষ খোঁজে পান না নাকি? আমি নিজের সম্পর্কে ভালো জানি।
এবার ফাহিম উঠে বলল,
- আমার দেখা সবচেয়ে কালো মেয়েটিও রোজ সপ্তাহে একবার নিজেকে সাজিয়ে ছাদের উপর রেলিং এ হাত রেখে বিড় বিড় করে যায় আনমনে।
- এই ছেলে' আপনি কিভাবে জানেন?
- একদা রাতেরবেলা এক বিয়ে বাড়িতে স্টেজ সাজাচ্ছিলাম, হঠাৎ করে একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পেলাম!
- বাহ! বাহ! অনেক সুন্দর হয়েছে।
শব্দ গুলো কানের ভেতর এতই জোরে আসল, মনে হল যেন স্কুলের ঘণ্টা বাজছে! আমি ভয় পেয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। দেখি একটা মেয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে, মেয়েটাকে আগে কখনো দেখেছি বলে আমার মনে নেই, কারন আমি এই বাসায় উঠেছি তখন সবেমাত্র ঘণ্টা তিনেক হলো। খুব বেশী সুশ্রীতো সে না কিন্তু তাকে অসুন্দর বলা কোনভাবেই যাবেনা। শুধু গায়ের রংটা কালো হলেও, আশ্চর্য্য ধরনের এক মাধুর্য ছিলো তার পুরো অঙ্গে।
- ওই ফাজিল ছেলে! আমি কালো? আমি বিকট শব্দে চিল্লাই? আমাকে দেখে কি তাই মনে হয়?
মেয়েটির রেগে যাওয়া দেখে ফাহিম চুপ মেরে গেল, সে যা চাইছিল তা পেয়ে গেল। তা দেখে রানা বলে উঠলো..!
- আরে ম্যাম! রেগে যাচ্ছেন কেন? একটু আগেই না বললেন আপনি সুন্দর না! আপনাকে পাম দেয়া হচ্ছে!
- আপনারা আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।
- হা হা হা... তাহলে পিছনে থাকি? ফেরিওয়ালা করা যাবে।
- মানে?
- আপনাদের ভ্যানিটিব্যাগে যা প্রসাধনী সামগ্রী পাওয়া যায়, তা দিয়ে অন্তত দুয়েকটা স্টল দেয়া যেতে পারে।
- রক্ষা করো মাবুদ। আপনিও তো দেখছি মস্ত পেঁচাল লোক।
- আমি আবার কি করলামরে বাবা, সত্য কথা বললেও দোষ।
- লাগবেনা আপনার সত্য বলা। সব গুলাই দেখি ফাজিলের হাড্ডি।
এই বলে মেয়েটি রাগে গজগজ করতে করতে বান্ধবীদের নিয়ে নিচে নেমে গেল।
তারপর শরিফ রানা কালাম ও ফাহিম মিলে কিছুক্ষণ গল্প শেষে সবাই ছাদ থেকে নেমে গেল, ডিনার সেরে যার যার মত ঘুমিয়ে পড়লো।
-
সকালবেলা হঠাৎ ফাহিমের ঘুমটা ভেঙে গেল, যায়গা বদল হওয়াতে এমনিতে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুম আসেনি, তার উপর যা একটু ঘুমাল তাও হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। তাই সে মনের দুঃখে চা আর বিস্কিট নিয়ে ছাদে চলে গেল, ছাদের রেলিং উপর বসে চায়ের সাথে বিস্কিটের স্বাদ নিচ্ছিল। এমন সময় পেছন থেকে একটি মায়াকন্ঠ ভেসে আসলো...
- এভাবে বসে আছেন কেন? পড়ে যাবেন তো।
রেলিং এর উপর থেকেই মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাতেই দেখে সেই মেয়েটি। বড় অদ্ভুত ব্যাপার, মেয়েটিকে কি নাম ধরে ডাকবে? গতকাল থেকেই সবাই দুষ্টুমি করে যাচ্ছে, অথচ এখনো নামটা জানা হয়নি, যেই একবার জানতে চেয়েছিল তাও তাকে ফাজিল উপাধি দিয়ে বসল। মেয়েটি তার প্রশ্নের কোন উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো,
- আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন না আমার কথা?
- জ্বি পাচ্ছি। আসলে ভোরের কুয়াশার মধ্যে আমার বসে থাকতে ভালো লাগে। তাই বসেছিলাম আরকি।
- কুয়াশার সুখ নেয়া হলে নেমে আসুন। পড়ে মরে গেলে পুলিশ আসবে, আমার আবার এসব ঝামেলা সহ্য হয়না।
- আপনি কি আমাকে নেমে আসার আবেদন জানাচ্ছেন নাকি নিজেকে সেইফ সাইটে রাখতেছেন।
- অতকিছু বুঝিনা, নেমে আসুন ব্যস। তার কথায় একটু রাগ মনে হলো, তাই তর্ক না করে ফাহিম নেমে আসলো। পাশেই কয়েকটা চেয়ার আর ছোট এক টেবিল ছিলো। সেখানে চায়ের কাপটা রেখে বসে পড়ল। হাতে জলন্ত মোমবাতি দেখে মেয়েটি বলল,
- দয়া করে সেটা নিভাবেন কি? আগুন টাগুন লেগে গেলে ফায়ার সার্ভিস এর ঝামেলা পোহাতে পারবো না।
- এই ছোট আগুনে কিছু হবে না।
- কোন কিছুকে ছোট ভাবা চলেনা। কারণ বিন্দু জল একত্রিত হয়ে সমুদ্র হয়।
- তর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন নাকি আপনি?
- হ্যা যুক্তি তর্ক।
- ওকে ওকে আর তর্ক করতে চাচ্ছিনা। নিভিয়ে দিলাম।
মোমের আগুন নিয়েছিল অবশিষ্ট কিছু ফুল প্যাকিং করতে, মেয়েটির জন্য তাও হলনা। তাই আগুনটা নিভিয়ে ফেলে চুপচাপ বসে আছে। শরীরে এক প্রকার রাগ কাজ করতেছে। কিন্তু এই সুন্দর সকাল কে মাটি কোনভাবেই করতে চাচ্ছেনা সে। কিছুক্ষন পর মেয়েটি তার সামনের চেয়ারে বসলো। ঠোটে ঠোট কামড়াচ্ছে, কিছু একটা বলতে চাচ্ছে কিন্তু কারন খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ফাহিমও তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে আবার অন্যমুখী হয়ে রইল। কিছুক্ষন বসে থেকে মেয়েটি আবার উঠে গিয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর আকাশ এলো তার বাসা থেকে, তার সাথে মেঘলা, শরিফ সানজানা, রানা অনন্যা, কালাম রিয়া সহ সবাই ছাদে এসে স্টেজের উপর বসলো গল্প করতে। সবাইকে দেখে ফাহিম স্টেজে ফিরে এলো, মেয়েটি ছাদের এক কোণায় এখনো দাঁড়িয়ে আছে। মেঘলা হটাৎ মেয়েটিকে দেখে ডাক দিল..!
- আরে পরী" তুমি ওখানে? এদিকে এসো বোন।
মেয়েটি সবার সামনে আসতেই মেঘলা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল। তোমাদেরকে তো এখনো পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি। তারপর মেয়েটির দিকে ইঙ্গিত করে বলল,
- এই হল সুফিয়া পারভিন(পরী) আমার সব চেয়ে আদরের ছোট বোন।
আর এরা হল......!একে একে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিল পরীকে।
মেঘলা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে দেখে পরী মিটিমিটি হাসতেছে, গতকাল থেকে যে কি হচ্ছে সেটা তো আর মেঘলা জানেনা।
যাইহোক" পরী সম্পর্কে মেঘলার কাজিন হলেও কখনো পার্থক্য করে দেখেনি সে, সব সময় আপন বোনের মত জানে। কারো সাথে পরিচিত হতেও ছোট বোন হিসাবে পরিচিত হয়, আজো তার ব্যতিক্রম হয়নি।
পরিচয় পর্ব শেষে কিছুক্ষণ আড্ডা শেষে মেঘলা ও আকাশ সেখান থেকে উঠে সানজানা ও অনন্যাকে নিয়ে কিছু আনুষঙ্গিক কথাবার্তা বলতেছে।
অন্যদিকে কালাম রিয়া ও ফাহিম মিলে গল্প করতেছে, এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে শরিফ ও রানা বেয়াইন হিসাবে পরীর সাথে দুষ্টুমি শুরু করে দিল।
.
- "আমি বিবাহিত। আপনারা এখন আসতে পারেন"
.
পরীর মুখে এমন কথা শুনে রানা ও শরিফ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। আর অদূরে দাঁড়ানো আকাশ মেঘলা সানজানা ও অনন্যা মুখ টিপেটিপে হাসছে।
কারণ রানা ও শরিফ মিলে পরীকে অনেক্ষন ধরে খুব চেতাচ্ছে, একজন বলে নাম্বারটা কি দেয়া যাবে? আরেকজন বলে পাত্র পক্ষ রেড়ি, আপনি শুধু মত দিন, আবার কেউ বলে রাজপুত্রের মত ছেলের সাথে আপনার বিয়ে দিবো।
যেমন কথার তেমন উত্তর দিয়ে পরী স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে, মেয়েটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে একটু আগে রানা ও শরিফকে একশ ভোল্ডের শক খাওয়ালো। তারপর সেখান থেকে উঠে পরী সোজা নিচে নেমে গেল।
কিছুক্ষণ পর সবাই নেমে নাস্তা সেরে নিল।
--
------চলবে--------
-

No comments

জনপ্রিয় পোষ্ট

  জন্ম নিবন্ধন করবেন ভাবছেন, আর ভাবনা নয় সপ্ন এখন সত্যি সব এখন হাতের মুঠোয়, [ http://bdris.gov.bd/br/application ]( http://bdris.gov.bd/br...

Powered by Blogger.