Header Ads

Header ADS

একাকীত্ব,

একাকীত্ব,
-
একটা সময়ের পর প্রতিটা মানুষই বোধহয় খুব একা হয়ে যায়। সে সময়টা ঠিক কখন বলা মুশকিল। এমনও হতে পারে, মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধির শুরুটাই একাকীত্বের শুরু।
কিংবা আংগুলের কড় গুনে হিসাব নিকাশ বুঝতে পারাটাই হতে পারে একাকীত্বের শুরু।
একাকীত্ব মানেই কি মানুষহীন, সঙ্গীহীন একা? জনমানবহীন অরণ্য বুকে ধারণ করা খুব জরুরী কি?
নাহ, তা না।
একাকীত্ব আমরা ধারণ করি বুকে, শূন্যতার ঠিক অতলে যেখানে বিষাক্ত কাদায় মাখামাখি হাঁটুজল থৈ থৈ। এর জন্য নির্জনতার প্রয়োজন হয়না। মানুষ হাজারো সুখের ভিড়ে নিজেকে একা আবিস্কার করতে পারে। লোকালয়ে শতক মানুষের ভিরে নিজেকে একা অনুভব করতে পারে। একাকীত্বের জন্য লোকালয় বা নির্জনতা, সুখ বা দুঃখ আপেক্ষিক নয়।
আমাদের মন একটি খোলা স্কুল ঘর। এখানে জ্ঞান আহোরণ হয়, বিতরণ হয়। পাঠ্যপুস্তকে ধর্মীয় নীতিমালা, সংস্কার ও নৈতিক মূল্যবোধের দীক্ষা ছড়ানো হয়। বীজ পুতা হয় উজ্জ্বল ভবিষ্যত ও সুখ-সাফল্যের। কিন্তু সেই খোলা স্কুল ঘরে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন বিষাক্ত কীট, অন্যায়, পাপ, অপরাধ, আকাঙ্খা কখন যে নিজের লিপ্সা পূরণে লেজ সুরসুর করে সবার অলক্ষ্যে ঢুকে পড়ে, তা কেবল সময়ের দাবী। তার পর পরই নষ্ট হয় মন, আর মনকে ধারণ করা মানুষ হয় বিপর্যস্ত, নিঃস্ব পরাজিত মানুষটির মত।
আর এমনই সূবর্ণক্ষনে একাকীত্ব সুযোগ বুঝে নিজের জায়গা করে নেয় বিপর্যস্ত তিক্ত মনে।
মনের কোন সীমানা নেই। শেষপ্রান্ত বলে কিছু নেই। আয়তন-ঘনত্ব-আকার বা দরজা জ্বানালা নেই। একাকীত্ব এখানে হুটহাট ঢুকে পড়ে, তারপর অবাধে বিচরণ করে।
হোক" রাজ পালঙ্কে কারো বাস! হোক পাশে পড়ে থাকা সুখের সম্পর্ক! সবকিছুর অলক্ষ্যে একাকীত্ব ঠিকি শুয়ে পড়ে দু’টি প্রাণের মধ্যখানে। তারপর দুঃখ গুলো জেগে উঠে কারণে অকারণে। মনের ঘরে অস্থিরতা হেটে বেরায় ঝুনঝুন শব্দে।
দামী পালংকে শুয়েও, নির্ঘুম রাত কাটে ।
সযত্নে পাশে রক্ষিত ভালবাসার হাতের স্পর্শে তখন আর শিহরন জাগেনা।
এ তো গেল “সুখে থেকেও ভূত দেখা”র পালা। কিন্তু যার সুখ নেই? রাজপালঙ্কে পাশে শুয়ে থাকা ভালবাসার স্পর্শ নেই? তার জন্য একাকীত্ব কি তবে বিনা নিমন্ত্রনে খোলা বারান্দায় আসন পেতে বসা নয়?
যিনি অতিমাত্রায় আহার করায় পেটের পীড়ায় হাঁফসাফ করছেন রাতভর, চোখে ঘুম নেই, তার চেয়ে বরং খেতে না পেয়ে ক্ষুধার জ্বালায় হাঁফসাফ করে নির্ঘুম রাত পাড়ি দিচ্ছেন যিনি, তার যন্ত্রনা, তার পীড়া কি বেশী নয়?
এ কেমন বিচার? কেউ খাবে! কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে!
মন বড় অদ্ভুত অদৃশ্য নিরাকার এক বস্তু।
এ মন কারণে অকারণে ব্যকুল হয়। একাকীত্ব থেকে পালাতে হারীয়ে যাওয়া অতীত খুঁজে খুঁজে পাগল হয়। ছিঁড়ে যাওয়া সম্পর্কের সুতো জোড়া দেওয়ার বৃথা চেস্টা করে।
আলো না আঁধার ঠিক বোঝেনা, নিঃস্বঙ্গতা এড়াতে চোখ বুজে সোনার হরিণের খুঁজে এদিক ওদিক ছুটে। নীতিজ্ঞানের পাপ পূন্যের গভিরতা খতিয়ে দেখেনা।
মানুষ বড় নির্লজ্জ্ব।
সুযোগ পেলেই নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্পর্কের শোকে, জীবন্ত সম্পর্কগুলোকে জ্যান্ত পুতে ফেলে। যা হারীয়েছে, যা অতীত, যা মুছে গেছে চিরতরে, তার খুঁজে মধ্যরাতে কষ্টবিলাসী হয়ে উঠে। তারপর বুকের এপাশ ওপাশ হাতড়িয়ে মরে! কোথায় তার ব্যাথা! বুকের ঠিক কোনখানটায় নীলচে জমিনে পোকামাকড়ের আনাগুনা, ঠিক বুঝে উঠেনা।
অবশেষে আমিও জেনে যাই মানুষ বড় একা! মন খারাপের একা রাতে আনমনে পথে নামি। দেখি রাস্তা সরে যায় দুর থেকে দুরে। সারি সারি গাছের আড়ালে নৈঃস্বর্গিক নিঃসঙ্গতা হাত বাড়িয়ে ডাকে। আমি নিশ্চল; এগিয়ে যাই এক পা দু’পা! পথ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়; তবুও হেঁটেই যায়!
নীরবতার কথোপকথন শুনি কান পেতে। চুপিচুপি রাত এসে পাশে দাঁড়াই! আচমকা আকাশ কেঁদে উঠে হু হু করে! আকাশের বুক ফেটে দুঃখ ঝড়ে পরে আমার মুখে, আমার বুকে! আমি মৃদু হেসে উঠি; জীবন্ত পোস্টার হয়ে দুঃখ লেগে যায় আমার গায়ে! মাঝে মাঝে মাঝরাতে চোখ মেলে বড্ড বিষন্ন লাগে! আত্মার গভীরে ঘুমিয়ে থাকা নির্লিপ্ত সমঝোতা টের পাই। ভালো লাগেনা হুটহাট এমন জেগে উঠা! চাইলেই কি এড়ানো যায়?
মনে পড়ে, দাদীমা বলতেন, এই জীবনের হকদার আমরা নই। আমরা ক্ষনিকের মেহমান মাত্র! এসেছি এক উদ্দেশ্য নিয়ে, যেতে হবে উদ্দেশ্য পূরণ করে। এর বাহিরে যা কিছু, সব মিথ্যা।
বিশ্বাস করেছি। দাদীমা তো ভুল বলেননা! কিন্তু অযাচিত মনে প্রশ্ন বার বার উকি দিয়ে যায়। যদি তাই হবে, তবে ক্ষনিকের এই অতিথীদের তিনি মিথ্যে সংসারে এত পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব করার মত বুদ্ধি দিলেন কেন?
-

No comments

জনপ্রিয় পোষ্ট

  জন্ম নিবন্ধন করবেন ভাবছেন, আর ভাবনা নয় সপ্ন এখন সত্যি সব এখন হাতের মুঠোয়, [ http://bdris.gov.bd/br/application ]( http://bdris.gov.bd/br...

Powered by Blogger.