Header Ads

Header ADS

"> তৃপ্ত ছায়া <" -

"> তৃপ্ত ছায়া <"
-
--------" পর্ব আটান্ন",
-
অনুষ্ঠান শেষ করে ওরা রুমে ফিরে এলো,
আজ মেঘলার মনটা ভেজাই খারাপ,
আজীবনের জন্য পরিবারের মায়া ত্যাগ করে নতুন জীবনে চলে যাবে, এমন বিষাদ না পারছে কাউকে বলতে, না পারছে সয়তে! এ কেমন যন্ত্রনা। তবুও সব কষ্টকে গিলে সকল যাতনার উর্দে গিয়ে জীবনের হিসাব মেঘলা ভালই করতে পারে, তাই সবার সাথে হাসি খুশিতে সময় গুলো পার করে দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে কান্নায় নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে, চোখ দুটো বারবার জলে ভিজে ভিজে উঠছে। কতক্ষণ একটা মানুষ নিজেকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখতে পারে? অনেকটা সময় স্টেজে সবার সামনে ভালো থাকার এক সুন্দর অভিনয় করে গেলেও নিজের মনের সাথে আর কত? কেউ পারেনা। তাই হয়ত আজ মেঘলাও পারেনি।
মেঘলা খাটের উপর বসে নিরবে কাঁদছে। এমন সময় হটাৎ দিহান এসে মেঘলাকে কনের সাজে সজ্জিত দেখে খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দিলো আর ছোট ছোট হাত দুটোই তালি দিতে দিতে বলল....
- অহ অহ" আপ্পিমনি বউ সেজেছে, আপ্পিমনি বউ সেজেছে। আপ্পিমনি তুমি বউ সেজেছ কেন?
তারপর এক দৌড়ে মেঘলার কোলে গিয়ে উঠে। ও ছোট মানুষ, ওকি বুঝে মেঘলাকে কেন বউ সাজতে হয়েছে। অবুঝ শিশুর অবুঝ প্রশ্ন, কি বলে সান্তনা দেবে? তাই মেঘলা অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত করে দিহানকে কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছে। একসময় দিহান মেঘলার কোলেই ঘুমিয়ে গেল।
পরী এতক্ষণ মেঘলার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, দিহানের কান্ড দেখে পরী নিরবে কাঁদছে, মাঝেমধ্যে হাত দিয়ে চোখের জল মুছতেছে। পরী কাঁদছে দেখে ওকে মেঘলা হাতের ইশারাই ডেকে বলল,
- পরী' আপুর কাছে এসো বোন।
পরী মেঘলার পাশে গিয়ে বসতেই মেঘলা দিহানকে খাটের একপাশে শুয়াই দিলো, এবার পরী মেঘলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মেঘলা পরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, পরী কাঁদছে দেখে ওকে কপালে একটা চুমু দিয়ে সান্তনা স্বরুপ বলল,
- কিরে পরী, পাগলী বোন আমার' তুমি কাঁদতেছ কেন? আমি কি চিরতরে হারীয়ে যাচ্ছি?
মেঘলা পরীকে সান্তনা দিচ্ছে টিকই, কিন্তু সে নিজেকে কোনভাবে ধরে রাখতে পারছেনা, কখন যে নিজের অজান্তেই কয়েক ফোটা চোখের জল গাল বেয়ে টুপ করে পরীর মুখের উপর গড়িয়ে পড়লো টেরই পাইনি।
- আপু তুমি কেঁদনা, তোমার কান্না আমার সহ্য হয়না। জানো তো।
- আরে দূর পাগলী' আমি তো কাঁদিনা বোন। তোমার এমন মনে হচ্ছে কেন?
- আর কত নিজেকে লুকাবে আপু? আমি সব বুঝি, জানো আপু" আমার নিজের কোন বোন নেই, কিন্তু তুমি তার চেয়েও বেশি কিছু, মনে হয় আমার কাছে তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আপু, তোমার মায়া মমতা ভালবাসা যা পেয়েছি, তা কখনো কারো কাছে পাইনি। আজ তা থেকেও বঞ্চিত হয়ে গেলাম।
এই বলে পরী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওর কান্নার গতি বেড়ে যাওয়াতে মেঘলা পরীর চোখের জল মুছে দিতে দিতে কপালে আরেকটা চুমু দিয়ে বলল,
- কিরে পাগলী' এভাবে কান্না করে কেউ? তুমি আমার একটি মাত্র ছোট বোন, তোমার চোখে জল দেখে আপু কিভাবে টিক থাকি বলো।
- আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপু। তুমি চলে গেলে আমি কার খাবারে ভাগ বসাবো? যে নিজ হাতে খেতে না পারলেও ছোট বোনটাকে খাওয়াই দিতো।
এখন থেকে ভাইয়া কখনো বকা দিলে কে বলবে" ওরে আমার রাজকুমারী" এদিকে আয়, ভাইয়া দেখবে না, আপু চুপি চুপি খাওয়াই দেয়, তোমার জন্য আপুও সারাদিন কিছুই খাইনি। যে আমার জন্য সারাদিন না খেয়ে অপেক্ষা করতো, যে পছন্দের কোন কিছু নিজে না কিনে আমার জন্য নিয়ে আসতো, সেই আপুকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো আপু?
- পাগলী বোন আমার এমন করেনা, আমি তো একেবারে চলে যাচ্ছিনা পাগলি। কালকে আবার আসবো।
- আমি দিহান নয় আপু, আমাকে মিথ্যে সান্তনা দিওনা।
পরীর কথা শুনে মেঘলা কোন ভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
- অরে আমার পাগলী আপু' মন ভার করেনা, আচ্ছা চকলেট খাবে? আমার ব্যাগে ক্যাটভেরি আছে, খাবে?
- না আপু,
- কি খাবে? শরিফ ভায়ের তক্তা বিস্কুট?
- আপু...' দেখো আমার কিন্তু মন খারাপ। - আচ্ছা টিক আছে, তাহলে আপু গল্প শুনাচ্ছি, তুমি চোখ বন্ধ করো।
তখন পরী মাথা নাড়িয়ে মেঘলার কোলে মাথা রাখা অবস্থায় চোখ ভোজে আছে, মেঘলা ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গল্প বলা শুরু করে।
- জানো বোন' আমার একটা রাজকুমারী আছে, আমি দেশে আসার পর থেকে সে আমাকে বড্ড জ্বালিয়ে মারে। আমি এমনিতে নিজে খেতে পারিনা অথচ প্রায় সময় ওকে খাইয়ে দিতে হয়, যখন মার্কেটে যায় তখন আমার জন্য কিছু কিনি বা না কিনি ওর জন্য পছন্দের জিনিষ কিনতে হয়, নাহয় আমার নতুন জামা বটির নিচে জবাই হয়।। সে শীতের রাতে নিজের কম্বল রেখে আমার কম্বলটা দখল করে বসে আর সারারাত আমায় কোয়াসা খাওয়ায়, প্রতিদিন ওর জন্য পছন্দের চকলেট আনতে হয়, নাহয় আমার যত কাপড় ছোপড় সব শাওয়ারের নিচে স্থান হয়। ওর এমন অমানবিক নির্যাতনের পরো আমার পাগলী বোনটাকে আমি সবচেয়ে বেশিই ভালবাসি।
মেঘলার কথা গুলো শুনে পরী আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে আপু বলে মেঘলার গলা জড়িয়ে ধরে শেষ বারের মত, আর নিজের অজান্তেই ওর মুখ থেকে গান বেরিয়ে গেল...!
- মায়ের বকুনি আর বাবার শাসন থেকে বাঁচিয়ে যে সারাক্ষণ রাখতো আমায়,
ছোট বোনটি যেন থাকে দুধেভাতে" কোনই কবলিত যেন না সে হয়,
জন্ম নিয়েছে যে পরের হবে বলে, ধরে রাখি তারে সেই ক্ষমতা নেই।
মেয়ে হয়ে এসেছে ভাগ্য লিখন, আমাদের ঘর ছেড়ে চলে সে যাবে।
বুবু মনে পড়ে, মনে পড়ে' তোর আদর তোর সেই স্নেহ, আমি সেই আদর সেই স্নেহ কোথায় পাবো?
বুবু' মরনের পরে যদি নতুন জীবন থাকে? আমি সেই জনমে তোর মেয়ে হয়ে জন্ম নিবো।
একটা ছোট্র দুর্ঘটনা নিয়ে গেল বুবুকে অনেক দূরে,
তার রেখে যাওয়া সেই হারমনিয়াম' পড়ে আছে একাই সে বাজেনা সুরে,
ভাবীকে দেখি আড়ালে মুছে সে দুচোখ" পুরনো ছবির মাঝে সৃতি হাতড়ায়, শুন্যতা থেকে যায় হয়না পুরন, নিয়তি' তবু তাকে মেনে নিতে হয়,
বাবাও দেখি শোকে হয়েছে পাথর, সন্তান হারানোর ব্যথা ভুলতে, সারাদিন বাইরে কাটিয়ে আসে হয়ত সৃতির সেই পাতা খোঁজতে।
আর আমার শুধু মনে পড়ে, তোর আদর তোর সেই স্নেহ, আমি সেই আদর সেই স্নেহ কোথায় পাবো?
বুবু মরনের পরেও যদি নতুন জীবন থাকে, আমি সেই জনমে তোর মেয়ে হয়ে জন্ম নেবো.....!!!
পরীর গান শেষ হতে না হতেই মেঘলা ওকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অঝর কান্নায় ভেঙে পড়ে।
এতক্ষণ শরিফ রানা সানজানা অনন্যা কালাম রিয়া ফাহিম সবাই মেঘলার রুমে বসে কিছু গল্পগুজব করছে আর বসে বসে ওদের দুই বোনের অবস্থা অবজারভ করতেছিল, এখন ওরাও নিজেদের ধরে রাখতে না পেরে চোখের জল মুছে সমবেদনা জানালো।
-
এবার বিদায় বেলা। একটু পরে মেঘলা পরিবার থেকে চির বিদায় নিয়ে শ্বশুরালয় চলে যাবে, গেস্টরা সবাই খাওয়া দাওয়া করে ফেলেছে, বরযাত্রীরা ধীরে ধীরে চলে যেতে শুরু করছে, বরের জন্য খাবারের আয়োজন করা হলো, আকাশ মেঘলা, শরিফ সানজানা, রানা অনন্যা, কালাম রিয়া, ফাহিম ও পরী এরা সবাই একই টেবলে বসে, মেঘলা শেষ বারের মত পরীকে নিজ হাতে খাওয়াই দেই, খাওয়া দাওয়ার এক পর্যায়ে শরিফ" কালাম" ফাহিম" অনন্যা" সানজানা সবাই মিলে একটু মজা করলো, তাও আবার তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু রানাকে নিয়ে, কিন্তু কে কি করতেছে বেচারা রানার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, সে আপন মনে খেয়েই চলছে, এমন সময় হটাৎ শরীফ বলে উঠলো...
- কিরে রানা" তুই খাচ্ছিস তো ভালো কথা, কিন্তু সাথে করে নিয়েও যাবি নাকিরে দোস্ত???
অনন্যা ভাবি তো আমাদের সাথেই খাচ্ছে...!
কথাটা শুনে রানা মুহূর্তেই বেকুব বনে গিয়ে ওদের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে বলল,
- মানে কি? আমি আবার কই নিয়ে যাচ্ছি?
- ওই যে দেখতেছি হাড্ডি গুড্ডি সব এক জায়গায় জমাতে শুরু করে দিলি।
এবার রানা তাকিয়ে দেখে সবার খাওয়া হাড্ডি গুলো ওর প্লেটের পাশে জমাচ্ছে সবাই মিলে। তা দেখে ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, ওরা নির্ঘাত কোন ষড়যন্ত্র করতেছে। তা বুঝতে পেরে সে মুচকি হেসে বলল..
- অহ" এগুলো তোদের জন্য জমা করতেছি।
- তা দিয়ে কি করবি?
- ভাবছি তোদের জন্য দাঁত খিলাল বানামু।
রানার কথা শুনে ওরা সবাই হাসতে হাসতে শেষ, এবার রানাও ছাড়েনি শরিফকে, সে মুহূর্তেই বলে উঠলো,
- আচ্ছা দোস্ত ভাল কথা, তুই না বলেছিলি আকাশের বিয়েটা খাবিনা! কিন্তু তুই তো দেখি সবার আগে.....!
- অই বেঠা কথা কম বল, সারাদিন মেলা কাজ করে ক্লান্ত, এখন শান্তিতে দুটো খেতে দে!
- আমার কি দোষ, তুই_ই তো বলেছিলি,
- দেখ' মোর একটা ইজ্জত বলে কথা আছে, এমন সুস্বাদু খাবার ফেলে কেউ কি না খেয়ে থাকে নাকি বেয়াক্কেল।
- ওই" আমারে বেয়াক্কেল কবিনা হারামি, আমার আক্কেল দাঁত উঠছে।
- অহ সরি দোস্ত, আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম যে লুলাপোলাড়া বড় হয়ে গেলি।
- কি কইলি..? তরে আইজ...!
- অহ থুক্কুরে' আর কমুনা ভাই, এবার শান্তিতে খা, শেষে নোবেল তিরস্কার সরি পুরস্কার দিমু।
এবার সবাই হেসে দিল, তারপর অনেক হাসি খুশির মধ্য দিয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে ওরা রুমে ফিরে এসে বিদায়ের জন্য রেডি হয়ে নিলো!
.
এবার বিদায়ের পালা,
মেঘলার একপাশে ওর আব্বু, আরেক পাশে মেজো ভাবি, তার পাশে মেজো ভাই এম এ মনসুর চৌধুরী, উনার পাশে বড় ভাই ওবাইদুর রহমান চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে। বাকীরা সবার মেঘলা ও আকাশকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘলা ওর আব্বুর কাছ থেকে বিদায় নিতে পায়ে ধরে সালাম করতেই উনি মেয়েকে দুহাতে উঠিয়ে নিয়ে বললেন,
- জানো মা? এইতো সেদিন ধরিত্রী স্পর্শ করেছিলে, তড়িঘড়ি করে দিন যে গেলো। আজ গৃহস্থে পা দিলে সেই ছোট্র পাখিটি। নিজের পায়ে দাঁড়াবার সময় হয়নি শেষ, মনে রেখো, সংসারে নারীর কর্মই সফলতা। সকলের জন্য সময় দিও, পরে নিজের কথা ভেবো। কনের সাজে দেখে আজ আনন্দে মন ভরে গেল। তবে কোথায় যেন বিদায়ের সুর বাজছে, অপেক্ষা এখন রাত পোহালেই ঘরের শুভা নিবে যাবে। বড্ড ভালবাসি মামনি। ভালো থেকো মা।
কথা গুলো বলেই উনি নিরবে চোখের জল ফেলতেছেন। তা দেখে মেঘলা ডুকরে কেঁদে উঠে আব্বুকে জড়িতে ধরে বলল...!
- আব্বুনী তুমি এভাবে কেঁদোনা, তোমার কান্না আমার সহ্য হয়না। আমি থাকতে পারবো না আব্বুনী।
কথা গুলো বলে মেঘলা হঠাৎ পাশে থাকা পরীর হাতটা ধরে ওর আব্বুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে থাকালো, তখন উনি মেয়েকে বললেন,
- কিছু কি বলবি মা?
মেঘলা তখন পরীর হাতটা ওর আব্বুর হাতে গছিয়ে দিয়ে বলল,
- আব্বুনী এই জীবনে তোমার কাছে আর কিছুই চাওয়ার নেই, পরী আমার ছোট বোনের মত, তুমি ওকে তোমার আরেকটা মেয়ের মত করে ভালবেসে আগলে রেখো।
- কি বলিস মামনি, ও আমার আরেকটা মেয়ে, ও তো আমাদের পরিবারেরই একজন সদস্য, এখন তুই নেই পরীই তো আমার একমাত্র সম্বল, তুই কোন চিন্তা করিস না মা, ও আজ থেকে আমার মেয়ে হয়ে থাকবে।
এই বলে উনি পরী ও মেঘলাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলেন, পরী ও মেঘলা তখন অঝর কান্নায় ভেঙে পড়ে, তারপর মেঘলা কোন রকমে নিজেকে সংযত করে ওর ভাবির কাছ থেকে বিদায় নিতে গেল...!
- ভাবি তুমি আমাদের মায়ের স্নেহে বড় করেছ! কখনো ভুলভ্রান্তি ছাই পাশ মাড়ালে তবে নিজ গুনে ক্ষমা করো।
এই বলে মেঘলা যেই পা ছোয়ে সালাম করবে তখনই উনি মেঘলাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন...!
- তোমার স্থান ওখানে নই বোন, তোমার স্থান আমার বুকে। শোন বোন, পুরুষ জাতটা হচ্ছে বন্য ঘোড়ার মত, যদি রেগে যায় তাহলে সংসার উলটপালট করে দেবে। তুমি যদি তোমার ঘরে শান্তি চাও তাহলে কক্ষনো তার উপর হুকুম চালানোর চেষ্টা করবেনা। কারণ হুকুমের দাশ হয়ে থাকার জন্য তার জন্মই হয়নি!
তবে হে" তার সাথে সব সময় ছায়ার মত থাকার চেষ্টা করো, তার প্রয়োজনের দিকে নজর রেখো, তার দেখাশোনাই কোন অবহেলা করোনা, তাহলে দেখবে সে কেমন সোজা ঘোড়ার মত তোমার কথায় চলে!
আর যদি এই কায়দায় না চলতে পারো বোন, তবে কখনো ওর মনে জায়গা করতে পারবেনা।
- তোমার উপদেশ কখনো ভুলবো না ভাবি।
- আমাদের ঘরটা অন্ধকার করে চলে যাবে ভাবতেই বড্ড কষ্ট হচ্ছে বোন।
- তোমাদের কাছে আরেকজনকে তো রেখে যাচ্ছি, ওকে তোমরা আমার মত করে রেখো ভাবি। পরীকে কখনো কষ্ট দিওনা, ও আমার অনেক আদরের ছোট বোন।
মেঘলার কথা শুনে উনি তখন পরীকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,
- এবার হল তো? পরী এভাবেই সারাজীবন আমাদের বুকের মাঝে থাকবে।
মেঘলা নিজের অজান্তেই কান্না ভেজা মুখে একচিলতে হাসি দিয়ে ওর মেজো ভাই ও বড় ভায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেল...!
- ভাইয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, তোমরা ভালো থেকো।
- বোনরে আমরা হয়ত কোন কোন সময় তোর আবদার অপুর্ন রাখলে তা ক্ষমা করে দিস, সারাজীবন তো ছোট বোনটাকে ধরে রাখার পারমিশন প্রকৃতি আমাদের দেয়নি, তাই আজ যেন বুকটা ফেটে চুচির হয়ে যাচ্ছে। তোর যা কিছুর প্রয়োজন হয় একটা ফোন করিস।
তারপর আকাশের কাছে গিয়ে বললেন,
- আমাদের কলিজার টুকরা বোনটাকে তোমার হাতে গচ্ছিত রাখলাম, তুমি ওকে সাধ্যমত ভাল রেখো, কখনো ওর মনে কষ্ট দিওনা।
- জ্বি ভাইয়া, আপনারা কোন চিন্তা করবেন না।
তারপর আরো কিছু প্রাসঙ্গিক কথাবার্তা শেষে ওরা মেঘলাকে আকাশের বাবা মাকে গছিয়ে দিলো।
মেঘলা বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে" কনের গাড়ি গেইটের সামনে উপস্থিত, অতিথিবর্গরা সবাই গাড়িতে উঠে গেল।
মেঘলাকে নিয়ে যাবে, তাই ওর সাথে আছে আকাশ তার পাশে শরিফ" রানা" কালাম" ফাহিম। আর মেঘলার পাশে সানজানা" অনন্যা" রিয়া মেঘলাকে বিদায় দিচ্ছে, এমন সময় মেঘলা বিচ্ছেদের ব্যথা সইতে না পেরে আব্বুর কাছে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা কন্ঠে সবার সামনে করুন সুর তোলল...
- আমি যাচ্ছি বাবা, আমি যাচ্ছি.....
চোখ মুছে মুখ তোল, স্নেহের বাঁধন খোলো, এবার তোমায় দিতে যে হয় যাবার অনুমতি, বাবা খেয়াল রেখো তুমি তোমার প্রতি!
আমি যাচ্ছি বাবা, আমি যাচ্ছি......!
আদর সোহাগ দিয়ে যদি করলে আমায় বড়, তবে কেন এমন করে কন্যাকে পর করো??
এই যদি হয় নিয়মনীতি এই সমাজের বিধান, হাসিমুখে করো বাবা কন্যা সম্প্রদান। তবে কেন কান্না চোখে? এ কোন অনুভূতি?
বাবা খেয়াল রেখো তুমি তোমার প্রতি, আমি যাচ্ছি বাবা, আমি যাচ্ছি...!
ভাইয়াকে জড়িয়ে- অফিস যাবার সময় যখন থাকব না আর আমি, চশমা নিতে ঔষধ খেতে ভুল নাগো তুমি, বুক যে আমার যাচ্ছে ভেঙে, মন মানেনা মানা, কেমন করে থাকব ছেড়ে নেই যে আমার জানা।
ভাবিকে জড়িয়ে- তুই যে আমার মা ধারিণী দেহেতে নাই প্রাণ, যেন বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে নিয়ে কেউ কলিজা খান।
তুমিও তো ভাবি জানই পরিণতি?
ও ভাবি খেয়াল রেখো তুমি বাবার প্রতি, আমি যাচ্ছি ভাবি, আমি যাচ্ছি।
আমি যাচ্ছি পরী, আমি যাচ্ছি।
আমি যাচ্ছি ভাইয়া, আমি যাচ্ছি,
আমি যাচ্ছি বাবা, আমি যাচ্ছি।
.
মেঘলার গান শুনে সবার চোখ অস্রু জলে ভিজে গেল, একে একে পরিবারের সবাই মেঘলাকে চোখের জলে বিদায় জানালো, এবার মেঘলা গাড়িতে উঠে গেল, গাড়িও ছেড়ে দিলো আকাশদের বাসার উদ্দেশ্যে, গাড়ি চলছে ধীর গতিতে, ধীরে ধীরে গাড়ি গুলো ওদের পরিবারের দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যেতে থাকে, সাথে মেঘলার মনের যাতনাও বাড়তে থাকে, কিছুদূর যাওয়ার পর দূর থেকে হটাৎ একটা গানের শব্দ মেঘলার কানে ভেসে এলো....!
- বরযাত্রী বিয়ের পাত্রী লইয়া চলে গাড়ি, শ্বশুরবাড়ি যায়রে ময়না বাপের ভিটা ছাড়ি...
মায়ে কাঁন্দে বাপে কাঁন্দে কপালে হাত দিয়া, ভাই বোন আর সাথীরা তার কাঁন্দে সৃতি নিয়া, তাদের দুঃখে দুসর হইয়া কাঁন্দে সারা বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি যায়রে ময়না......!
মায়ার বাঁধন ছিন্ন কইরা যখন ময়না যায়, কি দশা তার সেই জানে' অন্যের বোঝা দায়, বুক ফেটে যায় হাইরে হাই তার দেখিলে আহাজারি...
শ্বশুরবাড়ি যায়রে ময়না বাপের ভিটা ছাড়ি....!!!!
গান শুনতে শুনতে একসময় ওরা আকাশদের বাসায় পৌছে গেলো...!!
-
-------
.......চলবে......
-
মিস প্রিয়া চৌধুরী।

No comments

জনপ্রিয় পোষ্ট

  জন্ম নিবন্ধন করবেন ভাবছেন, আর ভাবনা নয় সপ্ন এখন সত্যি সব এখন হাতের মুঠোয়, [ http://bdris.gov.bd/br/application ]( http://bdris.gov.bd/br...

Powered by Blogger.